Recent Tube

আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া কখন শিরক আর কখন শিরক নয়। আব্দুল্লাহি হাদী বিন আব্দুল জলীল।







আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া কখন শিরক আর কখন শিরক নয়।
---------------- ◈◉◈----------------
 প্রশ্ন: 
 একজন মানুষ বেকার আছেন, তিনি তার আত্মীয় বা বন্ধু কে বললে হয়তো বা চাকুরীর ব্যবস্থা হয়ে যেতেও পারে কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন যে, এতে গুনাহ হতে পারে। কারণ হাদিসে পড়েছেন, মানুষের কাছে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ কর‍তে নেই এবং সাহায্য চাইলে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হয়। অন্যথায় শিরক হয়। এমতাবস্থায় কাউকে চাকুরীর প্রয়োজনীয়তার কথা বললে কি গুনাহ হবে?

 উত্তর:
যেকোনো দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন ও অক্ষমতার কথা মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা নিঃসন্দেহে উত্তম। তবে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় পাশাপাশি আল্লাহ যাদেরকে সামর্থ্য, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দিয়েছেন তাদের নিকট নিজের অভাব-অনটনের কথা তুলে ধরে সাহায্য চাওয়া মোটেও দোষণীয় নয়। 
আর কোন দুর্বল, অসহায় ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি যদি কোন সামর্থ্যবান ব্যক্তির নিকট সাহায্য চায় তাহলে তার উচিত, তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করা। এতে আল্লাহ খুশি হন এবং তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন।
আল্লাহ তাআলা ভালো ও আল্লাহ ভীতির কাজে একে অপরকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ
"আর তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য করো।" (সূরা মায়েদা: ২)
হাদিসে আছে,
اللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ
"কোনও ব্যক্তি যতক্ষণ তার কোনও ভাইকে সাহায্য করে ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সাহায্য করেন।" [সহিহ মুসলিম]
 আর যে কাজ করা জায়েজ সে কাজে কারও নিকট সাহায্য চাওয়াও জায়েজ। আল হামদুলিল্লাহ।

সুতরাং "নিজের অক্ষমতা, অভাব, দু:খ-দুর্দশা ইত্যাদি বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করা গুনাহের' এ কথা সঠিক নয়।‌ বরং আল্লাহ বান্দাকে যে ক্ষেত্রে সাহায্য করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দান করেছেন সে ক্ষেত্রে তার কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ। 

কিন্তু যে বিষয়ে তিনি কাউকে ক্ষমতা দেন নি তার কাছে সাহায্য চাওয়া বড় শিরক। যেমন: কবরে শায়িত মৃত ওলি-আউলিয়ার কাছে সন্তান চাওয়া, মনের আশা পূরণ ও বিপদ থেকে মুক্তির প্রার্থনা জানানো। কেউ জেনে-বুঝে এমনটি করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং 'মুশরিক' বলে গণ্য হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

◉ আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
 
‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার উপকার করতে পারবেনা এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। তুমি যদি এমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তাহলে কেউ তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিহত করতে পারেনা। স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান, তাকেই তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন; তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু’’। [সূরা ইউনুস: ১০৬ ও ১০৭]

  তিনি আরও বলেন,
وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ -إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ

‘‘তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা কিতমিরেরও [খেজুরের আঁটির গায়ে জড়ান পাতলা আবরণকে] মালিক নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌র ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবেনা’’। [সূরা ফাতির: ১৩-১৪]

◉ আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
 
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
 
‘‘মসজিদ সমুহ আল্লাহর এবাদত করার জন্যই। অতএব তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকোনা’’।
 যে কেউ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে এমন কিছু প্রার্থনা করবে, যার উপর তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষমতাবান নয়-যেমন: বিপদে পড়ে মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আহবান করা। এটি সেই শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। কুরআন ও সুন্নাহয় এ ব্যাপারে অসংখ্য দলিল রয়েছে।
আল্লাহু আলাম।
--------------◈◉◈--------------
 উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহি হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Post a Comment

0 Comments