Recent Tube

সমাজে প্রচলিত ১৬ টি মাস‌আলায় আমার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ: আসলাম হোসাইন।



সমাজে প্রচলিত ১৬ টি মাস‌আলায় আমার নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ:
----------------------------------------
শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এগুলো ঈমান আকিদার কোনো বিষয় নয়। তাই বিপরীত মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখা উচিত। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, নিজের মতকে চূড়ান্ত সঠিক মনে করে বিপরীত মত কে বাতিল করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়কে তার স্থানে রেখে পরস্পর শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি ও সোহার্দ্র‌ লালন করা উচিত।

সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি স্টাডি করে যা পেয়েছি এবং যেটাকে উত্তম মনে করেছি তা এক নজরে তুলে ধরলাম।

১. জুম‌আর ভাষা
--------------------------
জুম‌আ কোন ভাষায় হবে তা নিয়ে বিতর্ক খুব তুঙ্গে। এক্ষেত্রে আমার মতামত হচ্ছে, জুম‌আর খুতবায় পাঁচটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা সুন্নত। 
১. আল্লাহর প্রসংসা, 
২. রাসূল সা.- এর প্রতি দুরুদ পাঠ,
৩. উপদেশ ও নসিহত,
৪. কুর‌আন থেকে কিছু পাঠ, 
৫. মুসলমানদের জন্য দোয়া করা।

এখানের চারটি বিষয় আরবিতে বলা হবে। শুধু উপদেশ বা নসিহত অংশ বাংলায় বলা হবে। অথবা আরবিতে বলে বাংলায় সারাংশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এইভাবে আমরা উভয় মতের মধ্যে সমন্বয় করতে পারি।

২. কাবলাল জুম‌আ
------------------------------
নিম্নে দুই রাকাত, উর্ধ্বে খতিব মিম্বরে উঠা পর্যন্ত যত রাকাত সম্ভব পড়া। নির্দিষ্ট করে চার রাকাত‌ও কাবলাল জুম‌আ পড়া যাবে। তবে দুই রাকাত পড়লেও তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। দলিলের আলোকে এটাই সবথেকে মধ্যমপন্থী মত।

৩. আস্তে আমিন ও জোরে আমিন
--------------------------------------------------
দুইটাই হাদিস ভিত্তিক। যেকোনো একটার উপর আমল করলেই সুন্নত আদায় হবে। তবে যে মসজিদে আস্তে আমিন বলা প্রচলন সেখানে জোরে বলা উচিত নয়। এতে ফিতনা সৃষ্টি হ‌ওয়ার সম্ভাবনা থাকে

৪. র‌ফ‌উল ইয়াদাঈন একবার না তিন বার
------------------------------------------------------------
উভয় পক্ষের হাদিস সহিহ এবং দুই দিকেই সালাফদের আমল পাওয়া যায়। তাই যেকোনো একটার উপর আমল করলেই যথেষ্ট হবে। বাড়াবাড়ি কাম্য নয়।

৫. ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ
-----------------------------------------------------
দলিলের আলোকে সবথেকে জোরালোতম মত হচ্ছে, জোহর-আসর সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। আর বাকি নামাজে ফাতেহা না পড়ে চুপ করে ইমামের তিলাওয়াত শোনা। তবে কেউ যদি প্রতি ওয়াক্তে সূরা ফাতিহা পড়ে অথবা কোনো সালাতেই ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা না পড়ে তবুও তার সালাত হবে। কেননা, প্রত্যেক মতের পক্ষে দলিল আছে এবং সালাফদের এক বিরাট গোষ্ঠীর আমল রয়েছে।

৬. বিতির নামাজ
---------------------------
বিতর সালাতের মোট ১৩ টা পদ্ধতি রয়েছে। যেকোনো একটা অবলম্বন করলেই হবে। আমাদের সমাজের প্রচলিত বিতর সালাত সহিহ এবং হাদিস সম্মত। আহলে হাদিসের পদ্ধতি‌ও হাদিস সম্মত।

৭. সালাতে হাত বাঁধা
------------------------------
মুক্তাদি যেখানে হাত রাখলে কমফোর্ট ফিল করে সেখানেই হাত রাখবে। এটাই সুন্নত। তবে ইসলামের প্রথম কয়েক যুগে সালাফদের বুকে হাত বাধার প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা নাভির উপরে কিংবা নাভিতে হাত বাঁধতেন।

৮. তারাবির নামাজ
------------------------------
সাহাবিদের যুগে ২০ রাকাত তারাবিহ প্রসিদ্ধ লাভ করে। পরবর্তী যুগেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। তাই এটা উত্তম। সবথেকে উত্তম হচ্ছে, ইমাম সাহেব যত রাকাত পড়েন তার সাথে শেষ রাকাত পর্যন্ত তারাবিহ আদায় করা। তবে প্রয়োজনে এর কম বেশি করাও শরিয়তে সিদ্ধ। কেননা, রসুল সা. নির্দিষ্ট কোনো রাকাতে আবদ্ধ করে দেননি।‌

৯. ঈদের সালাতের তাকবির সংখ্যা
---------------------------------------------------
ছয় তাকবির ও বার তাকবির দুটাই সহিহ।

১০. শবে বরাত
------------------------
এটার ফজিলত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তবে এই রাতের স্পেশাল কোনো আমল নেই। 

১১. আরাফার রোজা
--------------------------------
যেদিন আরাফার মাঠে হাজিরা অবস্থান করবেন সেদিন যারা হ‌জ্জে যা‌বেন না তারা রোজা রাখবে। গবেষণার ভিত্তিতে পরের দিন রোজা রাখলেও আশা করি আল্লাহ তাআলা হাদিসে বর্ণিত ফজিলত থেকে বঞ্চিত করবে না। কেউ ইচ্ছা করলে এই দু`দিন‌ও রোজা রাখতে পারেন। সবথেকে উত্তম হচ্ছে জিলহজের প্রথম দিন থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা।

১২. কুরবানির সাথে আকিকা
--------------------------------------------
হানাফি মাযহাবে জায়েজ বলা হয়েছে। আবার অনেকেই নাজায়েজ বলেছেন। তবে সুন্নত হ‌লো আলাদা দেওয়া। আর যে বিষয় নিয়ে উলামাদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে সেটার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা উচিত, যা করলে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা যায়। তাই দুটো আলাদা দেওয়াটাই  উত্তম ও নিরাপদ।

#এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা মতবিরোধপূর্ণ নয় কিন্তু সমাজে প্রচলিত। এগুলোর ক্ষেত্রে আমি যা চূড়ান্ত সঠিক মনে করি তাই তুলে ধরা হলো:

১৩. ভাগে কুরবানি
----------------------------
এক পরিবার থেকে হোক আর ভিন্ন পরিবার থেকে হোক ভাগে কোরবানি জায়েজ। এটাই চূড়ান্ত। এর বিপরীত কোনো মত গ্রহণযোগ্য নয়।

১৪. ইল্লাল্লাহ জিকির ও মিলাদ-কিয়াম
---------------------------------------------------------
এগুলো সুস্পষ্ট বিদআত। এর বিপরীত কোনো মত গ্রহণযোগ্য নয়।

১৫. ফরজ নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত
-------------------------------------------------------------------
এটা রীতিতে পরিণত না করলে এবং জোর না দিলে সাধারণত জায়েজ কিন্তু সুন্নত হচ্ছে একাকী যিকির আযকার করা। আমাদের উ‌চিৎ সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা।

১৬. তাবিজ
--------------------
কুরআন সুন্নাহ থেকে হলে সাধারণত জায়েজ কিন্তু সুন্নত হচ্ছে ঝাড়ফুঁক করা।

পরামর্শ: 
উল্লিখিত দুটি জায়েজ হলেও যথাক্রমে বিদআত ও শিরকের সাথে এগুলোর যোগসূত্র রয়েছে। আর উসূল হচ্ছে, যে জায়েজ কর্ম হারামের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে সেই জায়েজ কর্ম‌ও পরিত্যাগ করা জরুরি। উপরোল্লেখিত দুটি বিষয় অল‌রে‌ডি সমাজে বিদআত ও শিরকের ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। অত‌এব, যারা এই দুটোর পক্ষপাতী তাদের আরো গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করা উচিত।

আল্লাহতালা আমাদেরকে উগ্রতা পরিহার করে মধ্যমপন্থী হওয়ার তৌফিক দান করুন।
------------------------- 
Aslam Hussain 
24/07/2022

Post a Comment

0 Comments