Recent Tube

হযরত মাওলানা আব্দুল লতীফ চৌধুরী পীর সাহেব ফুলতলী (রহ:) ছিলেন বিগত শতাব্দীর বাংলাদেশের ইলমুল কিরাতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার প্রমান বহন করেছে বালাই হাওরের অনুষ্ঠিত প্রায় ৩০/৪০ লাখ মানুষের উপস্হিতিতে ঐতিহাসিক জানাযা। এটা আমার জীবনের দেখা সর্ববৃহৎ জানাযা। উস্তাজুল আল্লাম শায়খুল হাদীস ইসহাক আল মাদানী



হযরত মাওলানা আব্দুল লতীফ চৌধুরী পীর সাহেব ফুলতলী (রহ:) ছিলেন বিগত শতাব্দীর বাংলাদেশের ইলমুল কিরাতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার প্রমান বহন করেছে বালাই হাওরের অনুষ্ঠিত প্রায় ৩০/৪০ লাখ মানুষের উপস্হিতিতে ঐতিহাসিক জানাযা। এটা আমার জীবনের দেখা সর্ববৃহৎ জানাযা।
________________________

উস্তাজুল আল্লাম শায়খুল হাদীস ইসহাক আল মাদানী 

বাংলার যমীনে ইসলাম প্রচারে মাওলানা ফুলতলী পীর সাহেবের অবদান :
_________________________ 

এক: তিনি দারুল কেরাত মাজিদিয়ার মাধ্যমে এশিয়া,ইউরোপ ও আমেরিকায় লাখ লাখ মুসলিম শিক্ষার্থী কে আল কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখিয়েছেন। অদ্যাবধি তার এ সুন্নাত দেশে বিদেশে চালু আছে।

দুই : তিনি ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে সিলেট বিভাগে শতশত আলিয়া মাদ্রাসা  প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এ ময়দানে এগিয়ে না আসলে সিলেট বিভাগে ইসলামী শিক্ষা দেওবন্দের গন্ডিতে অবরুদ্ধ হয়ে যেত।

তিন : জোট সরকারের আমলে আলিয়া মাদ্রাসার কারিকুলামে যখন ইসলামী শিক্ষাকে পিছিয়ে রেখে আধুনিক শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দাখিল, আলিম,ফাযিল ও কামিলকে যথাক্রমে এস. এস.সি/ এইচএসসি /ডিগ্রি এবং এম.এ  এর মান দেওয়া হল,তখন মাওলানা ফুলতলী (রহ:) এর ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন এবং বলেছিলেন ভবিষ্যতে আর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কোন  মুহাদ্দিস ,মুফাসিসর ও মুফতি তৈরী হবে না।আজ তাই হচ্ছে।আলিম পাশ করে সকল মেধাবী শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা  ছেড়ে ভার্সিটির বারান্দায় ভিড় করছে। ফাযিল ও কামিল ক্লাস গুলো ছাত্র শূন্য। এটাই বর্তমানে বাস্তবতা।

চার : তিনি অগনিত ইয়াতীম ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরদের নিজ খরছ শিক্ষা দিয়েছেন। আজও এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন তারই বড় ছেলে মাওলানা এমাদ উদ্দীন চৌধুরী (হাফি)।আল্লাহ তাকে সুস্থতার সাথে দীর্ঘজীবি করুন।

পাচ: তিনি গোটা বাংলাদেশে কোন ডিমান্ড বা চুক্তি ছাড়া  ইসলামের বাণী  প্রচার করেছেন।আমি নিজে ১৯৬৮ সালের রমযানে তার বাড়িতে গিয়ে এক রাত তার বাড়িতে থেকেছি। কেননা তার এক ছেলে মাওলানা ফারুক চৌধুরী আমার এয়ারমেট ছিলেন।আমি এক নগন্য তাকে গোলাপগঞ্জের একটি ওয়াজে দাওয়াত দিয়েছলাম।তিনি কোন পূর্বশর্ত ছাড়া দাওয়াত কবুল করেছেন। ওয়াদামত মাহফিলে হাযির হয়ে হ্রদয় গ্রাহী ওয়াজ ও মোনাজাত করেছেন।রাতে আমার বাড়িতে থেকে আমার আব্বা জানকে আমার শিক্ষার ব্যাপারে অনেক মূল্যবান নসিহত করেছেন। আজকালতো সেলিব্রেটি কোনো বক্তাকে ওয়াজে আনতে হলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। 

ছয়: মাওলানা ফুলতলী (রহ) তার সবছেলেকে বড় বড় আলেম করেছেন। কেহ কেহ মুফতী ও হয়েছেন আবার কেহ ঢাবি থেকে এম.এ ডিগ্রি ও নিয়েছেন। তারই এক ছেলে  প্রিন্সিপাল কমর উদ্দিন চৌধুরী (হাফি) ঢাবির আমার ক্লাসমেট। তিনি একজন কৃতি ছাত্র ছিলেন। তারই এক নাতি আহমদ হাসান চৌধিরী(শাহান)আজ ঢাবির প্রফেসর। আলহামদুলিল্লাহ।

সাত: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে যখন  সিলেটের আরেক রত্ব আল্লামা মুশাহিদ বাইয়মপুরি (রহ:) কোন কারনে ইস্তেফা দিয়ে চলে গেলেন তখন গাছবাড়ি মাদ্রাসাকে তার সঠিক অবস্হানে টিকিয়ে রাখার জন্য মাওলানা ফুলতলী (রহ:) এর বিকল্প কোন ব্যাক্তি খুজে পাওয়া যায় নি। মাওলানা ফুলতলী (রহ:) সানন্দে গাছবাড়ি মাদ্রাসার হাল ধরেন যার ফলে আজও গাছবাড়ি মাদ্রাসা তার ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে। 

আট: মাওলানা ফুলতলী (রহ) সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সম্ভবত ২০০৪ সাল তখন তিনি বেশ অসুস্হ ছিলেন। আমি ইসহাক আল মাদানী, বায়তুল মুকাররাম মসজিদের খতীব আমার ওস্তাদ উবায়দুল হক সাহেব (রহ:), বিশ্বনাথের অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক আহমদ চৌধুরী সাহেব রহ  এবং এম.পি ফরীদ উদ্দীন চৌধুরী (হাফি) উনাকে দেখতে উনার বাড়িতে যাই। তাকে দালান কোঠা ছেড়ে একটি কাচা ঘরে একটি চৌকিতে অবস্হানরত অবস্হায় পাই।তিনি দীর্ঘসময় আমাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় আলাপ করলেন। আমাকে তিনি খুবই আদর করতেন।তিনি জানতেন যে আমি তার মসলকের কোন লোক নয় তারপরও। তার আতিথ্যতায় আমরা সবাই মুগ্ধ হলাম। এ ধরনের রাহবার আর কবে জন্ম নিবে তা আল্লাহই ভালে জানেন। 

নয়: যুগস্রেষ্ট ইসলামী মনীষি হযরত মাওলানা ফুলতলী (রহ) এর সাথে আমার দু তিনটি মাসআলায় মত ভিন্নতা রয়েছে। আর দলিল ভিত্তিক মত ভিন্নতাই রয়েছে। আর দলিল ভিত্তিক মত ভিন্নতাই ইসলামের সৌন্দর্য। এ কারণেই হানাফি, মালিকী,শাফী ও হাম্বলী মাযহাবের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ:) এর বিশিষ্ট দুজন ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহ:) ও ইমাম আহমদ (রহ:) অনেক মাসআলায় তাদের ওস্তাদের সাথে মত ভিন্নতা প্রকাশ করেছেন। মত ভিন্নতা  যেন হিংসার কারণ না হয় এবং ইসলামী ঐক্যের পথে অন্তরায় না হয় এটাই ইসলামের কাম্য।মত ভিন্নতা থাকার পরে ও আমার দৃষ্টিতে মাওলানা ফুলতলী (রহ) বিগত শতাব্দীতে বাতিলের আতংক ছিলেন।তিনি হকের পথে রক্ত দিয়েছেন এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।ইসলামের ৫ টি স্তম্ভ তথা উসূলকে অবিকৃত রাখতে গিয়ে তিনি সৈয়দপুরে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন।পাকিস্তান আমলে তিনি নিযামে ইসলাম পার্টি, যেটি পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ ইসলামী দল ছিল, এ দলের বৃহত্তর সিলেটের সভাপতি ছিলেন। তিনি তার জীবনে কোন পার্থিব সুবিধালাভের আশায় কোন অনৈসলামী সরকারকে সমর্থন করেন নি।

আমি দোয়া করি আল্লাহ তাঁর কুরআনের খেদমতকে কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ আসনে সমাসীন করুন।
আমীন।
------------------------- 

Post a Comment

0 Comments