♦সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন ডায়েরি- পর্ব ২;
২০১৮ সালে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার সময় ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। তিনি তখন এর উপাচার্য হওয়ার জন্য আবেদন করেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফেডারেশন তখন তাকে গ্রহন করেনি।মুর্শেদ তখন সিলেটী ইজম তুলেন। সিলেটের মানুষও এই ইজমে প্রভাবিত হয়ে তাকে সমর্থন করে ব্যাপক লেখালেখি করেন। সবশেষে নিজের স্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন মুর্শেদ। তার স্ত্রী আমাতুজ জোহরা রওশন জেবিন রুবা বঙ্গবন্ধুর সহচর, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর কন্যা। ফরিদ গাজীকে ভালো করে চিনতেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ।
একসময় একসাথে জেল খেটেছেন এই দুই নেতা। সেই সুবাদে স্বামী মুর্শেদকে নিয়ে বঙ্গভবনে ছুটে যান জেবা। 'চাচার' হাতে পায়ে ধরে স্বামীর নিয়োগ বাগিয়ে নিয়ে আসেন।
এদিকে,স্বামীকে উপাচার্য বানিয়ে নিজেই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে যান জেবা। নবীণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বানিজ্যের দোকান খুলে বসেন। চাকরি প্রত্যাশীদেরকে উপাচার্যের বিবির কাছে ইন্টারভিউ দিতে হত।
সুবিদবাজারের বাসায় বসে খোলামেলা টাকার কন্টাক্ট করতেন। এমনকি যেদিন কথা বলতে যাবেন সেদিনই কিছু অগ্রীম পেমেন্ট দিয়ে আসতে হত তাকে। বাকী টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ ছিলো। প্রতিটা কিস্তি নিজের ডায়রীতে লিখে রাখতেন জেবা। কড়ায় গন্ডায় টাকা পরিশোধ হলেই তার চাকরির ফাইল এগুতো। প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা ,কর্মচারীকে এ নিয়োগ বানিজ্যের সহযোগী বানান মিসেস উপাচার্য। তারাই খদ্দের নিয়ে আসতো , ম্যাডামের সাথে কথা বলিয়ে দিতো। সুবিদবাজার ব্লুবার্ড স্কুলের উল্টোদিকের বাসায় গত রমজান মাসের এক রাতে পরিচয় গোপন রেখে এক চাকরি প্রত্যাশীর সাথে গিয়েছিলাম আমিও। আধা ঘন্টার বেশি সময় উপাচার্য এবং মিসেস উপাচার্য পাশাপাশি সোফায় বসে ওই চাকরিপ্রার্থীর সাথে খোল্লাম খোল্লাম দরদাম করেন। পুরোটা সময় আমি নিশ্চুপ ছিলাম। উপাচার্যও তেমন কোন কথা বলেননি। পাঞ্জাবির ওপর ঘি রঙ এর শাল পরা উপাচার্য প্রথমেই তার বেগম সাহেবার দিকে তাকিয়ে বললেন 'উনার সিভি কার কাছে? 'আমার কাছে আছে, ফাইলে কাজ চলছে'- গুরুগম্ভীর গলায় জেবার উত্তর। তারপর শুরু হলো লেনদেনের আলাপ। পুরোটা সময় সর্দারনির মত একাই দর কসাকসি করে যাচ্ছিলেন মিসেস উপাচার্য। "অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কি না করছে- সেই তুলনায় আমরাতো কিছুই না" বার বার শোধাচ্ছিলেন বেগম উপাচার্য। (চলবে...)
-------------------------
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, ও গবেষক।
0 Comments