রণাঙ্গনের তাকবির ও আল্লাহর সাহায্য
(বদর থেকে চায়ের নগর স্মারকে প্রকাশিত)
- ইউসুফ বিন নুরী চৌধূরী
৮ আগষ্ট ২০০৯, মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এইচ. এস. সি ১ম বর্ষের ছাত্রদের ভর্তি শেষে তাদের ক্লাস শুরু হয়েছে, ভর্তি কেন্দ্রেীক ইসলামী ছাত্রশিবিরের বরাবরের মতো সরব উপস্থিতি আর ছাত্রদের শিবিরের দাওয়াতে সাড়া প্রদানে অছাত্রদের সংগঠন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ হিংসায় ফেটে পড়ে। নবীণ বরণ পরে ছাত্রদের শিবিরের প্রতি সম্পৃক্ততা দেখে কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলনা তারা। মনে মনে নানান ধরনের ফন্দি-ফিকির করছিল। বিবেক বু্দ্ধি বলিদান দিয়ে তাদের সাথে যোগদেয় ছাত্রদল।
তখন কলেজের সভাপতি ছিলেন সাবেক মহানগর সভাপতি, সাবেক কেন্দ্রীয় আইন বিষক সম্পাদক আনোয়ারুল ওয়াদুদ টিপু ভাই আর সেক্রেটারী ছিলেন আখতার হোসেন রাজু ভাই। তাদরে বিচক্ষণতায় বার বার ছাত্রদল-ছাত্রলীগের যৌথ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হতে লাগল, প্রতিদিনই ক্যাম্পাস থমথমে থাকত মনে হত যেকোন সময়েই সংঘর্ষ হতে পারে, ক্যাম্পাসে এসে আমরা আমাদের কর্মী ভাইদের চোখে চোখে রাখতাম যাতে আমাদের দ্বারা কোন অনাকাঙ্কিত গঠনা না ঘটে।
৮ আগষ্ট সকাল হতেই ক্যাম্পাস উত্তপ্ত। ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্চিল আজ কিছু একটা গঠতে যাচ্চে। এটাযে পূর্বেরই ষড়যন্ত্র তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল কারণ কোন কারণছাড়াই কলেজের ইতিহাসে কখনো তারা সকাল ১১টার মধ্যে ক্যাম্পাসে আসেনি। তখন সকাল ৯.৩০, ক্যাম্পাসে আমাদের উপস্থিতি কম যারাও এসেছে তাদের বেশীর ভাগই ক্লাসে, এই সুযোগটাই তারা কাজে লাগাতে চেয়ে ছিল। তারা আস্তে আস্তে আমাদের টেন্ড(আমরা যে খানে বসি)দিকে এগুতে থাকে, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে টিপু ভাই সবাইকে একত্রিত করতে বললেন আর রাজু ভাই বললেন যারা ক্যাম্পাসে এখনো আসেনি তাদের এখনই ফোন দিয়ে আসতে বলার জন্য। সবাইকে ফোন দিতে ব্যস্থতায় কেটে গেল ৫-৬ মিনিট। সর্বোসাকুল্যে আমাদের টেন্ডে ১৫-১৬ জন আর তাদের ২০০-২৫০ জন, হটাৎ মোহিনী মোহন ভবনের সামনে চিৎকার শোনাগেল, ক্লাসফেরত আমদের ২-৩ জন ভাইদের ওপর ছাত্রদল অতর্কিত হামলা চালায়, ভাইযেরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিষয়টি সমাধানের জন্য আখতার হোসেন রাজূ ভাই এগিয়ে যান এবং ছাত্রদলে সাথে সমোজতার চেষ্টা করতে থাকেন, ওপরদিকে যোগেন্দ্র মোহন বভনের সামনে ক্লাসফেরত আমদের আরকেজন ভাইয়ের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, আমাদের ভাইয়েরা এগিয়ে গেল সামান্য হাতা-হাতির রূপ নেয়। টিপু ভাই, রাজু ভাই সহ আমরা এগিয়ে যাই, আমাদরে সবাইকে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু তাদের চিন্তাই ছিল আমাদের সাথে সংঘর্ষ, এই রকম সুযোগ কি তারা আর কোন দিন পাবে? রক্ত নিয়ে খেলা আর উল্লাস করার জন্য তারা তৃষনার্ত হয়ে পড়ল। কখন যে ছাত্রলীগের ভিতরে ঢুকে পড়লাম খেয়ালই করলাম না। কিছুক্ষণ পর যখন খেয়াল করলাম তখন দেরী হয়ে গেছে আমাদের ভাইদের হতে আমি অনিক দূরে চলে এসেছি। ওদের মাঝখানে আমি একা। কারো কারো মুখে আমি বাকা হাসির ঝিলিক দেখতে পাচ্ছি, এ হাসির অর্থও বুঝতে বাকি রইল না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমি তাদেরকে আমাকে মারার জন্য আহবান জানালাম কিন্তু কেউই সাহস করতে পারলনা। তাদের একজন লম্বা একটি বাশ নিয়ে আমার মাথা বরাবর আঘাত করল তাও আবার আমার মাথা হতে ৪-৫ হাত দূরে, ততক্ষণে রাজু ভাই এসে আমাকে আমাদের টেন্ডে নিয়ে আসেন। আমরা ৩০-৩৫ জন ভাই টেন্ডে অবস্থান নিয়েছি, এতক্ষনে ছাত্রদল তাদের নিরাপদ দূরত্বে চলে গিয়েছে। ছাত্রলীগ আস্তে আস্তে আমাদরে টেন্ডের দিকে এগিয়ে আসতে থাকল আমাদের খুব কাছাকাছি এসে এবার আমাদের টেন্ডে দিকে ঢিল ছুড়তে থাকল। আমাদরে ৩০-৩৫ জনের বিপরীতে তাদরে ১৫০-২০০ জন সতস্ত্র, তাদের হাতে লাটি রামদা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমাদের ও কিছুভাই তাদরে ঢিলের জবাব দিতে থাকল, কলেজ সভাপতি টিপু ভাইয়ের নির্দেশ তাদের দিকে কোন প্রকার ঢিল ছুড়া যাবেনা। সবাই থেমে গেল আমরা দাড়িয়ে-দাড়িয়ে তাদের ঢিল খেতে থাকলাম আমাদের চোখের সামনে কিছু ভাই আহত হতে থাকল, কিছুটা ভীত হয়ে পড়ল আমাদের ভাইয়েরা..
হঠাৎ আমাদরে ক্যাম্পাস হতে গগণ বিদারী আ্ওয়াজ আসল, নারায়ে তাকবির...... আর আমাদরে কে আটকায়? পুরো শরীরে যেন ৫হাজার বোল্টের বিদ্যুৎ চমকাল, নিমিষেই উরে গেল সমস্ত ভীতি, ঐ স্লোগানটাই যেন তাদের অন্তরে ভীতির সৃষ্টি করণ, আমরা খালি হাতেই আল্লাহর উপড় ভরসা করে দৌড়দিলাম সোজা ছাত্রলীগের দিকে, খালি হাতে সতস্ত্র ছাত্রলীগের দিকে যাওয়া মানে মৃত্যুর দিকে যাওয়া, আমরা সোজা শাহাদাতের দিকে দৌড় দিলাম। শুরু হল সংঘর্ষ ৩০-৩৫ জন ভাইরা যেন ৩০০-৪০০জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল, দু-মিনিটের বেশী তাদেরকে পাওয়া যায়নি, যে যেদিকে পারে দৌড়ে পালিয়েছে কাপুরুষের দলেরা। যখন ক্লাসে ক্লাসে খবরটা চলে গেল তখন সবাই নেমে আসে ৩০-৩৫ জন বৃদ্ধিপেয়ে পুরো ক্যাম্পাসটাই যেন আমাদের হয়ে গেল। আমাদের ভাইরা সারা ক্যাম্পাস তন্ন তন্ন করে সব জায়গায় তাদরে খুজতে লাগল। কিন্তু তাদের কি আর পাওয়া যাবে? তাদেকে আমাদের ভাইরা ক্যাম্পাস হতে ৩-৪ কিমি দৌড়িয়ে দিয়ে এসেছে।
আল্লাহ কিভাবে তার বান্দাদের সরাসরি সাহায্য করেন তা ঐদিনই সরাসরি অনুভব করলাম, তার ভেবেই নিয়ে ছিল ৮ আগষ্টই মদন মোহন কলেজে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সলিল সমাধি হবে, কিন্তু আল্লাহর ফায়সালা তো ভিন্ন? সবাই একত্রিত হয়ে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চুল পরিমান ক্ষতি করতে পারেনি, ঐ দিনও পারেনি, তার আগেও পারেনি, ভর্বিষতেও কোনদিন পারবেনা। মদন মোহন কলেজের প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি ইসলামী ছাত্রশিবিরে, এই ক্যাম্পাস আমাদের, এই ক্যাম্পাস শিবিরের।
৮ নভেম্বর ২০০৯।
দিনটি সম্ভবত মঙ্গলবার মদন মোহন কলেজে দিনটি মিছিল বার হিসেবেই পরিছিত। বরাবরের মতোই মদন মোহন কলেজ ছাত্রশিবির এর পূর্ব নির্ধারিত মিছিল ছিল। ২দিন আগ হতেই দাওয়াতী কাজ চলছিল। আমাদের প্রতিটি মিছিলে উপস্থিতি ছিল অন্য সংগঠনের কাছে ইর্ষনিয়। আর গগনবিদারী নারায়ে তাকবির যেন তাদের কলিজাকে দির্ণ-বিদির্ন করে দিত।
টিক ২ মাস আগে ৮ অগাস্ট ছাত্রলীগের সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে আমাদের সংঘর্ষ হয় ঐ দিন তাদের কলেজ সভাপতি সহ অনেকেই আহত হয়, তারা কলেজ ক্যাম্পাস হতে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে, এ সংঘর্ষ যদিও ছাত্রশিবিরকে চিরতরে কলেজ হতে নিশ্চিন্ন করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছিল কিন্তু আল্লাহর পরাকল্পনা ছিল ভিন্ন। আমার এখনো মনে আছে আল্লাহর সাহায্য কিভাবে এসেছিল তা নিজ চোখে দেখেছিলাম। সংঘর্ষের পর হতেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ইমেজ সংকট দেখা দেয়, ইমেজ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ছাত্রশিবিরকে পাল্টা জবাব দেয়া ছাড়া তাদের সামনে কোন রাস্তাই ছিলনা। একদিকে শিবিরের আকাশ ছুয়া জনপ্রিয়তা আর অন্যদিকে তাদের জন ভাটা। তাই মহাপরিকল্পনায় ব্যস্ত তারা
বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রলীগের আচরণ তেমন সুবিধাজনক মনে হচ্ছিল না, তারা যে আবারো সংঘর্ষে জড়াতে চাচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছিল। অনেক তুচ্ছ ঘটনাকে তারা সামনে নিয়ে আসতে পারে তাই সকল দায়ীত্বশীলদের চোখ আর কান ছিল খোলা। কলেজের সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল ওয়াদুদ টিপু ভাই আর সেক্রটারী আখতার হোসেন রাজু ভাই। রাজু ভাই ইংলেণ্ড যাওয়ার জন্য কাজপত্র তৈরী করতে ঢাকা-সিলেট ব্যস্থ থাকায় ক্যাম্পাসে সময় দিতে পারতেন না তাই সবই টিপু ভাইকে সামলাতে হতো, আমি তখন সদস্য ছিলাম আর ইন্টার ওয়ার্ডের সভাপতি। সভাপতির কঠোর নির্দেশ যে কোন উপায়ে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে হবে।
৮ নভেম্বর, এইদিনটিকে তারা টিক করে রেখে ছিল, তবে কি করতেচায় তা আমাদের আজানা, কলেজ মসজিদে ফজরের নামাজ পরে কলেজে পরিষ্কারেরর কাজে লেগেযাই, অনেক জায়গা খোজা খোজির পর কিছু বাশ, স্টাম্প, ব্রেঞ্চের কাট ইত্যাদি ছাত্রলীগের টেন্ডের আশেপাশে পাই, আরো খোজার পর সিঁড়ির নিচে এক ব্যাগ রামদা পাওয়া যায় এই বিপুল পরিমান অস্ত্র আমরা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলি, বিপুল পরিমান অস্ত্র দেখেই অনুমান করা যাচ্ছিল কি ভয়ংকর পরিকল্পনা ছিল তাদের। নাস্তা করে কিছু ভাইদের দাওয়াত দিয়ে হলকা বিশ্রামে যাই।
সকাল ৮:৩০ এ আমরা ৫-৬ জন ক্যাম্পাসে যাই, ক্যাম্পাসে তখনো শুরু হয়নি, ক্লাসে ছাত্ররা তেমন নেই, ছাত্রলীগের ট্যান্ড সবরব। দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে তারা যে কোন উপায়ে সংঘর্ষ বাধাতে চাচ্ছে, কোন এক অজানা ভয়ে ভেতর ছেয়ে গেল। সময় যতই যাচ্ছে ততই তাদরে ট্যান্ড সবরব হয়ে উটছে, অমরা সর্বোচ্চ ১০ জন তখন, মোবাইল নিলাম টিপু ভাইকে কল দেয়ার জন্য, ততক্ষনে তিনি চলে এসেছেন, কলেজ সভাপতি কলেজে প্রবেশ করলেন বীরবীক্রমে, টিক আমাদের ট্যান্ডের মাঝখানে থামালেন তার মোটর সাইকেল, সাইকেল হতে নামার পূর্বেই ২০-২৫ জন ভাই তার দিকে এগিয়ে গেল,হাত মেলাল। টিপু ভাই আসার সাথে সাথে মনের ভেতরে যে ভয় আর সংক্ষা ছিল তা উড়ে গেল। টিপু ভাইয়ের কাছে গেলাম ক্যাম্পাস পরিস্থিতি বর্ণনা করলাম, সব শুনে তিনি শুধু একটা মুচকি হাসি দিলেন ব্যাস….. । ৯:১৫ তে তিনি আমাকে ক্লাসে ক্লাসে দাওয়াতী কাজের জন্য পাঠিয়ে দিলেন সাথে আরো দুইজন, ছাত্রলীগের ট্যান্ড যখন অতিক্রম করি তখন তারা ৩০-৪০ জন বাকীরা কোথায় চলেগেছে। ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে মিছিলের জন্য দাওয়াতী কাজ করছি ঠিক ১১:৩০ এ মিছিল সোলেমান হল হতে শুরু হবে। প্রতিটি ক্লাসে যাচ্ছি আর দাওয়াতী কাজ করছি হঠাৎ এক ভাইে এসে খবর দিল প্রিবিবিএ ক্লাসে আমাদের এক ভাইয়ের সাথে ছাত্রলীগ কর্মীর সমস্যা হয়েছে, ক্লাস শেষে তারা ওকে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টিপু ভাইকে কল দিলাম, তিনি জানালেন বিষটি তিনি জানেন তিনি ক্লাসে যাচ্ছেন ঐ ভাইকে নিয়ে আসার জন্য, তিনি বিষয়টি সমাধান করে দিবেন আমাকে তিনি দাওয়াতী কাজে মন দিতে নির্দেশ দিলেন। আমি দাওয়াত শেষ করে ট্যান্ডের দিকে রওয়ানা দিলাম ছাত্রলীগের ট্যান্ড তখনো ৩০-৪০ জন। ট্যান্ড এসে দেখলাম টিপু ভাই আমদের ঐ ভাইটিকে নিয়ে বসে আছেন আর ফোনে সমাধান করার চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সমাধানের উদ্দ্যেশে তাদের ট্যান্ডে ঐ ভাইকে নিয়ে গেলেন, ক্যাম্পাসে আমাকে বসিয়ে রাখলেন, কোন উপায়ে যেন উত্তেজিত না হই সেই নির্দেশ দিলেন, যে কোন উপায়ে তিনি সমাধান করবেন সেই আশ্বাস দিলেন। ইতি মধ্যেই তারা শক্তি বৃদ্ধি করতে লাগল।
টিপু ভাই ঐ ভাইকে নিয়ে গেলেন একা, আমার কেন জানি মন চাইলনা টিপু ভাইরে পেছনে পেছনে আরো ২জনকে পাঠালাম। ছাত্রলীগের ট্যান্ডে শুরু হয়েছে আলোচনা, তাদেরকে উত্তেজিত দেখা যাচ্ছে নমর কন্ঠ কথা বলছেন ঠিপু ভাই তারা আরো উত্তেজিত হচ্ছে। আমাদের কিছু ভাই ছাত্রলীগের ট্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছে আর আমি বাধা দিচ্ছি, এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের ঐ ছেলেটি চিৎকার চেচামেছি শুরু করল তার সাথে আরো ২-৩ জন। টিপু ভাইকে ঐ ভাইকে রেখে চলে যেতে বলছে, আমাদের দুইজন ভাই খুবই উত্তেজিত হয়ে উটল সাথে তারাও। টিপু ভাই আমাদের ভাইদের শান্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন, ছাত্রলীগের একজন টিপু ভাইয়ের দিকে আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলছে বুঝা যাচ্ছে শাষানোর চেষ্টা করছে আমদের এক ভাই খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠল, টিপু ভাই তাকে মেরে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তখন আমাদের টেন্ডে ২০ জনের মতো, আবু জেহেলের উত্তরসূরীরা চিন্তা করছিল এইতো সময় শিবিরকে মেরে ক্যাম্পাস হতে বের করে ক্যাম্পাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার। তারা সবাই টিপু ভাইয়ের উপস্থিতিতে ঐ ভাইয়ের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে যায়, তাদের থামাতে টিপু ভাই যথা সাধ্য চেষ্টা করছেন কিন্তু তারা এক যোগে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলে, কয়েকজন “জিনিস” আনার জন্য দৌড় দিল। আমাদের টেন্ডের অবস্থা আরো ভয়ানক ২০ জনের সবাই খুবই উত্তেজিত, শিবির সভাপতির উপস্থিতিতে এমন কাণ্ড? কখনো মেনে নেয়া যায়না, এখুনি বুঝি ঝাপিড়ে পরবে ছাত্রলীগের টেন্ডের দিকে। বুহ্য বেধ করে চিন্নভিন্ন করে দিবে সব এই ২০ জন যেন এখন ১০০ জনের ভূমিকায়। আমি প্রাণপন চেষ্টা করছি আমাদের ভাইদের থামাতে আর শান্ত রাখতে। হঠাৎ চোখে পড়ল ছাত্রলীগের একটি ছেলে লাটি হাতে দৌড়ে আসত, টিপু ভাইয়ের উপস্থিতিতে আমাদের ভাইকে আঘাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। টিপু ভাই আগের মতোই শান্ত তিনি তাদের শাস্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি টেন্ডে বসে উনার দিকে নজর রাখছি উনি আমার দিকে একবার থাকালেন চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলাম, বুঝলাম শান্ত থাকার নির্দেশ। ছাত্রলীগের ইচ্ছা কালেমার পতাকাবাহী কাফেলাকে আজই নিশ্চিন্ন করে দিবে।
ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে গেল শিবিরের সাথে ছাত্রলীগের সমস্যা চলছে যে কোন সময় বড় কোন সমস্যা হতে পারে। আমি তাৎকনিক মহানগর সেক্রেটারী মফিক ভাইকে ফোনে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি জানালাম সংঘাত ঘটার আশংখাও জানালাম। ঐদিকের অবস্থা আরো খারাপ হলো সবাই যেন আমাদের ভাইটির উপড় ঝাপিয়ে পড়বে, ছাত্রলীগের কে যেন টিপু ভাইকে কি বলল শুনা গেলনা। হঠাৎ ছাত্রলীগের টেন্ড হতে গগণবিধারী আওয়াজ “নারায়ে তাকবির” যে তাকবির শুনে যুগে যুগে আবু জেহেলদের কলিজায় কাপন শুরু হয়ে যেত আর মুজাহিদদের ঈমান আরো বেড়ে যেত। এবারো ব্যাতিক্রম হয়নি, ২০ জনের চোট্ট একটা টিম ২০০ জনের আওয়াজ “আল্লাহু আকবার” বলেই খালি হতে ছাত্রলীগের টেন্ডের দিকে দৌড়। আল্লাহু আকবার তাকবির শুনে নিজেরো ইচ্চা ছিল তাদরে দিকে দৌড় দেয়ার, ঝাপিড়ে পড়ার, চিন্নভিন্ন করে দেয়ার কিন্তু দায়িত্ব আমায় আটকে দিল, টিপু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম, তিনিও র্নিবাক দাড়িয়ে আছেন আর তারা আর আমাদের ভাইদের সংঘর্ষ চলছে। আমি দুজন ভাইকে দুই গেইট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে টিপু ভাইয়ের দিকে গেলাম । নির্দেশের জন্য তার দিকে তাকিয়ে রইলাম, টিপু ভাইকে নিশ্চুপ দেখে দায়ীত্বশীল পর্যায়ের কিছু ভাই আমাদের ভাইদের থামানোর চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে তারা বুঝে গেল তাদের রাখা অস্ত্রপাতি আর জায়গা মতো নেই। আমি টিপু ভাইয়ের পাশে দাড়িয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি করব? একটু থেমে তিনি শুধু এইটুকু বললেন গেইট বন্ধ করে দাও কেউ যেন বাহিরে যেতে না পারে। আমার শরীরে ৫০০০ বোল্ড বিদ্যুৎ চমকাল। এবার নিজে তাকবির দিলাম আল্লাহু আকবার……… বলে আবারো ঝাপিড়ে পড়লাম। সর্বোচ্ছ ২০ সেকেন্ড এর মধ্যেই তাদের সব পরিবল্পনা আল্লাহ নস্যাত করে দিলেন। যে যেদিকে পারে দৌড়ে পালিয়ে গেল, কেউ বাহিরে কেউ ক্লাসে। মূল গেইট আর পেছনের গেইট আমাদের ৪ জন করে ভাই পাহারা দিচ্চে। ভিতরে চলছে দৌড় প্রতিযোগিতা। তাদের বেশ কয়জন আহত হলো। ৩ মিনিট পর টিপু ভাই সবাইকে থামানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের ২০ জনের টিম এবার সত্যিই ২৫০ জনের টিম হয়ে গেল যেদিকে তাকাই শুধু আমাদের লোক। আমাদের অনেক ভাই তাদের খোজে ক্লাসে ক্লাসে যাকই পাচ্চে তাকেই রাম ধোলাই। তাদের যে ছেলেটি লাটি হাতে এসেছিল তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেথলাম, আমি আর টিপু ভাই তাকে সহ ৫জনকে সিএনজি করে ওসমানি মেডিকেলে পাটিয়ে দিলাম। প্রায় ১৫মিনিট পর ক্যাম্পাসে শুরু হলো মিছিল আর ক্লাসে খোজা খোজি, মিছিল শেষে প্রায় ৩০০জনকে নিয়ে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ক্যাম্পাস হতে বের হয়ে আসলাম।
আল্লাহ বদরের প্রান্তর হতে এভাবেই তার সাহায্য সরাসরি দিয়ে আসছেন, আর যুগে যুগে নব্য আবু-জেহেল ও তার উত্তরসূরীদের পদদুস্ত করছেন। নিজের চোখে আরেকটি বদরের প্রান্তর দেখলাম। আল্লাহু আকবার স্লোগানের যে এতো পাওয়ার তা শুধু তারাই বুজতে পারে যারা রণাঙ্গনে এই স্লোগান শুনেছিল। আল্লাহর পরিকল্পনা না থাকলে অস্ত্রসজ্জিত তারা আর আমাদের খালি হাত কখনোই ২০ সেকেন্ডের মধ্যে বিজয় অর্জন করা সম্ভব হতো না, আজো ৮ আগষ্ট ও ৮ নভেম্বর দু চোখে আয়নার মতো ভেসে উঠে।
-------------------------
লেখক : প্রবন্ধ লেখক, কলামিস্ট ও অনলাইন একটিভিস্ট।
0 Comments