Recent Tube

শায়েখ আলী হাসান উসামার বক্তব্যের ভুলভাল দলিলের জবাব ও সত্যের মাপকাঠি রাসূল সা. সাহাবাগণ নয় এর প্রমাণ-পর্ব-০২ (মিয়ারে হক ব্যাখ্যা পর্ব); - ওমর ফারুক আব্দুল্লাহ।


শায়েখ আলী হাসান উসামার বক্তব্যের ভুলভাল দলিলের জবাব ও সত্যের মাপকাঠি রাসূল সা. সাহাবাগণ নয় এর প্রমাণ-পর্ব-০২ (মিয়ারে হক ব্যাখ্যা পর্ব) 

মিয়ারে হক্ব কি?
==================
১. الحق বা সত্য কি? 
১.১ হক্ব এর পরিচয়
১.১.১ الحق শব্দের বিশ্লেষণ- 
শাব্দিক বিশ্লেষণে হক্ব শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। কয়েকটি অর্থ হলো- ( الله/ القرآن/ التوحيد / الإسلام/ العدل / الصدق/ نقيض الباطل/ الأحقية والأولوية/ وجوب العذاب/ الدين في الذمة /الحظ والنصيب / الحاجة /البيان /الإنجاز والـتأكيد)
শব্দটি اسم فاعل হিসেবে কুরআনে এসেছে, অর্থ হিসেবে স্বয়ং আল্লাহকে বুঝিয়েছে- 
ثُمَّ رُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلاهُمُ الْحَقِّ / فَذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلالُ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ
শব্দটি اسم مفعول হিসেবেও এসেছে। وَإِنَّ فَرِيقاً مِنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ / هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُوراً وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ
শব্দটি যে সকল অর্থে ব্যবহৃত হয়- 
في عرف الفقهاء والمتكلمين: هي اللفظ المستعمل فيما وضع له في أصل اللغة.
والخلاصة: أن الحق في الشريعة الإسلامية يطلق على عدة معان منها:
الموجِد للشيء، وهو الله سبحانه وتعالى.
والموجَد بحسب اقتضاء الحكمة.
والاعتقاد للشيء المطابق.
وللفعل والقول بحسب ما يجب، وبقدر ما يجب.
★★★
১.১.২ الحق এর সংজ্ঞায়ন- 
أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ  إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ  (যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন।) 
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছীর রহি. বলেছেন, 
الذي لا شك فيه ولا مرية ولا لبس فيه ولا اختلاف فيه ، بل هو كله حق يصدق بعضه بعضا ، لا يضاد شيء منه شيئا آخر
 “অর্থাৎ হক্ব বা সত্য এমন বিষয়, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, কোন সংশয় ও বৈপিরত্য নেই। বরং যার সবটুকুই সত্য। যার এক অংশ অপর অংশকে সত্যায়ন করে, যার এক অংশ অপর অংশের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ”
★★★
১.১.৩. হক্ব হলো স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। দলিল-
আল্লাহর নিজের একটি নাম হলো  الحق 
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ  (এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান।)- লুকমান-৩০
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّهُ يُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَأَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ –(এগুলো এ কারণে যে, আল্লাহ সত্য এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।) সূরা হজ্জ-৬
★★★
১.১.৪. হক্ব হলো ওহী, কুরআন, আল্লাহর কথা, হাদীস এবং ইসলাম
আল-কুরআনে প্রধান এবং মৌলিক যে বিষয়টি শিখিয়েছে, সেটি হলো হক্ব বা সত্য। কুরআনকে বলা হয়েছে সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। আমরা প্রথমে কুরআন থেকে الحق বা সত্য সম্পর্কে ধারণা নিতে চাই। কুরআনের কয়েকটি আয়াত দেখি। 
وَبِالْحَقِّ أَنزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا 
(আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা ও ভয়প্রদর্শক করেই প্রেরণ করেছি।) 
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۖ (যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক।)- বাকারা-২৬
سَنُرِيهِمْ آيَاتِنَا فِي الْآفَاقِ وَفِي أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ الْحَقُّ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ (এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কোরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়?) সুরা ফুসসিলাত- ৫৩
لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ (তারা জানে যে, এটাই সত্য আল্লাহর পক্ষ থেকে)-বাকারা ১৪৪
وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَهُمْ (আর [এই গ্রন্থ তথা কুরআন] সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে)-বাকারা ৯১
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ (নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি। আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন না।) 
الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ (বাস্তব সত্য সেটাই যা তোমার পালনকর্তা বলেন। কাজেই তুমি সন্দিহান হয়ো না।) বাকারা-১৪৭
★★★
১.২. কে হক্ব নিয়ে এসেছে? 
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِن رَّبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَّكُمْ (হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে।)- সূরা নিসা- ১৭০
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِن رَّبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَّكُمْ (হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে।) 
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ (তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।) 
★★★
১.৩. হক্ব শব্দের মূল্য উদ্দেশ্য- 
হক্ব এতক্ষণের আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, এখানে হক্ব দ্বারা মূলত আল-কুরআন ও সুন্নাহ উদ্দেশ্য। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, হক্ব আল্লাহ প্রেরিত ওহী উদ্দেশ্য।  যেমন আল্লাহ বলেন- 
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا (বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।) 
بَلْ أَتَيْنَاهُم بِالْحَقِّ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ (বরং আমি তাদের নিকট সত্য পৌঁছিয়েছি। মূলত তারা তো মিথ্যাবাদী)-মু’মিনুন-৯০ 
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ (আপনি পথ অনুসরণ করুন, যার আদেশ পালনকর্তার পক্ষ থেকে আসে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুশরিকদের তরফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন।)
হাদীসে এসেছে- 
حَتَّى فَجِئَهُ الْحَقُّ وَهْوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ فَجَاءَهُ الْمَلَكُ فِيهِ فَقَالَ اقْرَأْ‏ (অবশেষে তাঁর কাছে সত্যের বাণী (ওহী) আসল। আর এ সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন। সেখানে ফেরেশতা এসে তাঁকে বলল, আপনি পড়ুন)- বুখারী
كان جبريل ينزل على النبي صلى الله عليه وسلم بالسنة، كما ينزل عليه بالقرآن (জিবরাঈল আ. রাসূল সা. এর নিকট যেভাবে কুরআন নিয়ে আসতেন, সেভাবে হাদীসও নিয়ে আসতেন)- দারেমী
عن ملك بن انس رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تركت فيكم امرين لن تفعلوا ماتمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله (“হযরত মালিক বিন আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলে করীম (সঃ) বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটো জিনিস রেখে গেলাম । যতক্ষন তোমরা এ দুটো জিনিসকে শক্ত ভাবে ধারণ করবে ততক্ষণ তোমরা কখনও পথভষ্ট হবে না । এ দুটো জিনিস হচ্ছে আল্লfহর কিতাব তথা কোরআন শরীফ এবং তার রাসুলের সুন্নত”।)
★★★
১.৩.১. হক্ব শব্দের সার নির্যাস
উপরোক্ত আলোচনা থেকে যে সার নির্যাস বের হয় তা হলো, হক দুই ভাবে আমাদের কাছে এসে। আর আমরা ওহীর প্রকার হিসেবে চিনি। 
ওহী  দুই প্রকার- 
১) ওহীয়ে মাতলু (কুরআন) 
২) ওহীয়ে গাইরে মাতলু (হাদীস) 
★★★
২. মিয়ার তথা মাপকাঠি/পরিমাপক 
২.১. মিয়ার এর পরিচয়
এবার আসুন মিয়ার নিয়ে একটু দেখি। معيار শব্দের অর্থ হলো পরিমাপক। যা দ্বারা পরিমাপ করা যায়। মেজারমেন্ট কাপ, মেজারমেন্ট টেপ, বাটখারা, লিটার কাপ, থার্মোমিটার, ব্যারোমিটার, অক্সিমিটার, ঘড়ি এ সবই পরিমাপক। একেকটি যন্ত্র দিয়ে একেক ক্যাটাগরির পন্য পরিমাপ করা যায়। 
★★★
২.২. একটি আয়াতের ব্যাখ্যা- 
اِتَّبِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكُمْ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ لَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهٖۤ اَوْلِیَآءَ١ؕ قَلِیْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ
"তোমরা তাঁর অনুসরণ কর, যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং তা বাদ দিয়ে আউলিয়াদের অনুসরণ করো না। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।"-সূরা আল আরাফ : ৩
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বাগবীতে আসছে-  لا تتخذوا غيره أولياء تطيعونهم في معصية الله تعالى
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন-ثم قال تعالى مخاطبا للعالم : ( اتبعوا ما أنزل إليكم من ربكم ) أي : اقتفوا آثار النبي الأمي الذي جاءكم بكتاب أنزل إليكم من رب كل شيء ومليكه ، ( ولا تتبعوا من دونه أولياء ) أي : لا تخرجوا عما جاءكم به الرسول إلى غيره ، فتكونوا قد عدلتم عن حكم الله إلى حكم غيره 

★★★
২.৩. ক্বারী তায়্যিব সাহেবের মত-
দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাক্তন মুহতামিম মাওলানা ক্বারী তায়্যিব (র) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে-
جیسا که ما انزل الیکم کا تقاضا هي كه معيار حق ما انزل هو جو خدا کی طرف سے نازل شده هو اور هم تك بعينه وهي نازل شده چيزهونچي هو - مقالات طيبة ص ٦٠
“যেভাবে ما انزل اليكم অর্থাৎ 'যা তোমাদের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে' এর দাবী ও স্পষ্ট চাহিদা হচ্ছে যে, তা সত্যের মাপকাঠি হবে। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এবং তা আমাদের নিকট হুবহু সম্পূর্ণ অবিকৃত ভাবে পৌছেছে।"-মালাকাতে তায়্যিবাহ : ৬০
★★★
২.৪. মিয়ারে হকের মূল কথা- 
অতএব মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি/মাপযন্ত্র/পরিমাপক বলতে বুঝায় এমন বিষয়, যার কথা ও কাজ কোন রকম যাচাই-বাছাই ও পরখ করা ছাড়াই গ্রহণ করতে হবে এবং তাকে দিয়েই অন্যদের কথা-কাজ যাছাই বাছাই করতে হবে। আর তা হলো নিশ্চিতভাবেই ওহী বা কুরআন ও হাদীস। আর এর বার্তাবাহক হিসেবে সত্যের মাপকাঠি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম। 
★★★
২.৪.১. কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কিছু মানা যাবে না- দলিল
إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ (বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। ) 
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ (এমনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নির্দেশরূপে অবতীর্ণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর কবল থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী) 
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ( যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।) 
★★★
৩. গাণিতিক বিশ্লেষণে সত্যের মাপকাঠি
৩.১. গণিতে পরিমাপক
আমরা যা কিছু পরিমাপ করি, তার একটা একক রয়েছে। একক শব্দের মধ্যেই এর উত্তর রয়েছে। একক কখনও বহু সংখ্যা হতে পারে না। একক হবে এক সংখ্যা। গণিত ও বিজ্ঞানের ভাষায় কোন কিছু পরিমাপ করার সংখ্যাকে একক বলে। 
পরিমাপের জন্য একটি  একক  প্রয়োজন। একক হলো এমন একটি পরিমাপ যা একটি নির্দিষ্ট মানকে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন:- দৈর্ঘ্যের প্রমিত একক হলো মিটার, সময়ের প্রমিত একক হলো সেকেন্ড,  ওজনের প্রমিত একক হলো কিলোগ্রাম, ইত্যাদি।
গ্রনলান্ড ও লীন পরিপাম সম্পর্কে বলেন- 
The process of obtaining a numerical description of the degree to which an Individual possesses a particular characteristic."
★★★
৩.২. উদাহরণ
আমরা জানি মৌলিক একক সাতটি। যেমন- দৈর্ঘ্য=মিটার, ভর=গ্রাম, সময়=সেকেন্ড, বৈদ্যুতিক প্রবাহ=অ্যাম্পিয়ার, তাপমাত্রা=কেলভিন, পদার্থের পরিমাণ=মোল, দীপণ তীব্রতা=ক্যান্ডেলা। 
সময় দিয়ে একটা উদাহরণ দেই। ১ দিন বলতে কি বুঝি? ২৪ ঘন্টা। এটা কিন্তু একক না। একক নির্ধারিত হবে সেকেন্ডের মাধ্যমে। ঘন্টা কাকে বলে? ৬০ মিনিটকে। মিনিট কাকে বলে? ৬০ সেকেন্ডকে। তাহলে দিন বলতে কি বুঝি? অতএব দিন বলতে বুঝি ৬০x৬০x২৪=86400 সেকেন্ড।  
এখন যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, সূর্যের দূরত্ব কত? আমরা সংখ্যা মিটার বা মিটারের বৃহৎ অংশ কিলোমিটারে প্রকাশ করব। কিন্তু সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করব না। বা অ্যামিটার দিয়ে বলব না। এটাই স্বাভাবিক। 
★★★
৩.৩. বাস্তব পরীক্ষণ
আপনাকে দুটো বাস্তব পরিক্ষণ দিচ্ছি। 
★★
১. হাতে ১০ টি নাড়িকেল পাতার শলা (কাঠি) নিন। অথবা দশটি পাঠকাঠি নিন। এবার এটাকে ৫ টি করে দুই ভাগ করুন। 
প্রথম ভাগের প্রথমটি নিয়ে ১ ফুটি/৬ ইঞ্চি বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিতা/স্কেল দিয়ে মেপে ভেঙ্গে নিন। এবার এই কাঠিটি দিয়ে মেপে দ্বিতীয়টিকে সমপরিমাণে ভাঙ্গুন।  এরপর দ্বিতীয়টি দিয়ে তৃতীয়টি, তৃতীয়টি দিয়ে চতুর্থটি এবং চতুর্থটি দিয়ে পঞ্চমটি ভেঙ্গে নিন। ৫ নম্বরটি এবার ফিতা/স্কেল দিয়ে মেপে দেখুন। অবশ্যই পরিপামের তারতম্য হয়েছে। 
পক্ষান্তরে অন্য ৫টির প্রত্যেকেটি স্কেল/ফিতা দিয়ে মেপে ভাঙ্গুন। দেখুন তেন কোন তারতম্য হবে না। 
★★
২. দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে ২ কেজি চাল নিন। এবার বাটখারা ফেলে দিয়ে সেই পাশে চাল রেখে চালকে পরিমাপক বানিয়ে আবার দুই কেজি চাল মাপুন। এবার এই দুই কেজি চাল দিয়ে আগেরটি নামিয়ে আরও দুই কেজি মাপুন। এভাবে ৫/৬ বার মেপে শেষবারের চালটা পাল্লায় দিয়ে বাটখারা দিয়ে মাপুন। দেখুন তো, কতগ্রাম বেশি হলো? 
★★★
৩.৪ রাসূল সা. আসল মাপকাঠি 
একথা সহজেই বলা যায় যে, রাসূল আকরাম সা. হচ্ছেন সত্যের একমাত্র উনিটারি বা একক। একক কখনও বহুবচনে হতে পারে না। সুতরাং বহুজন হওয়ার কোন সুযোগ নাই। 
আমরা একটাই দাবী করেছি যে, রাসূল সা. হলেন আসল বা প্রকৃত মাপকাঠি। রাসূল সা. এর নিকটই ওহী আসত। সুতরাং তিনিই বলতে পারেন, সত্য কি বা মিথ্যা! সকল সাহাবা আজমাঈন এমনকি বর্তমান সময়ের সকল দলিলাদিও রাসূল সা. এর নিকট আসা ওহী তথা কুরআন ও হাদীস দ্বারা মেপে নিতে হবে যে, তা সঠিক কি না। এখন আপনি ইজমার কথা বলুন বা কিয়াস। তা সবই কুরআন ও সুন্নাহর দালিলিক ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। এমনকি যদি তিনি সাহাবা আজমাঈনও হয়ে থাকেন। নাকি আপনি সাহস করে এটা বলতে পারবেন যে, ইজমা বা কিয়াস কুরআন/হাদীসের ইঙ্গিতের বাইরে নিজেরা মনগড়াভাবে দিয়ে থাকেন? 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ- فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِر- ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।) 
এই আয়াতে অন্যদের আনুগত্যের ব্যাপারে কন্ডিশান দিয়ে দিয়েছে।  আনুগত্য ততক্ষণ, সত্যের উপরে যতক্ষণ। সত্য নিয়ে বিরোধ বাঁধলে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানেও নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর রাসূলকেই (সা.) মিয়ারে হক তথা সত্যের মাপকাঠি তথা সত্যের পরিমাপক বানানো হয়েছে। 
★★★
৩.৫. কালিমার দ্বিতীয় অংশ
সত্যের  মাপকাঠি কি তা প্রমাণ করার জন্য কালিমার দ্বিতীয় অংশই যথেষ্ট। এখানে তো নবী মুহাম্মাদ সা. কে রাসূল ঘোষণা করার অর্থ এই যে, মুহাম্মাদ সা. ই একমাত্র রেসালাতের পরিমাপক এবং তিনিই একমাত্র সত্য মিথ্যাকে আলাদা করার ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ তো তাকেই شارع বা শরীয়ত প্রণেতা বানিয়েছেন। 
মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী দওদূদী দস্তুর বইয়ে বলেছেন- (মূল কথা) ইসমত উঠিয়ে নিলে কোন নবীই সত্যের মাপকাঠি থাকতে পারেন না। 
অর্থাৎ ইসমত সত্যের মাপকাঠি হওয়া একটা আবাশ্যক বিষয়। সেক্ষেত্রে কোন সাহাবীকেই ইসমতের ছাঁচে ফেলার সুযোগ নাই। 
★★★
৪. সত্যের মাপকাঠিতে সাহাবা আজমাইন রাদি. অবস্থান
৪.১. জামায়াতে সাহাবা 
জামায়াতে সাহাবার ব্যাপারে বক্তব্য হলো, তারা সত্যের পরিমাপে উত্তীর্ণ অর্থাৎ معيار على اتباع الحق । তারা আমাদের কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব সত্যকে মানার ব্যাপারে। কিভাবে সত্যকে অনুসরণ করতে হয় তা তারা দেখিয়ে গেছেন। ইজমায়ে সাহাবা অবশ্যই অনুসরণীয়।
★★★
৪.২. আকিদা ত্বহাবী থেকে 
সাহাবীগণ বিষয়ে ইমাম আযমের আকীদা ব্যাখ্যা করে ইমাম তাহাবী বলেন:
وَنُحِبُّ أَصْحَابَ رسُولِ الله ﷺ، وَلاَ نُفْرِطُ في حُبِّ أَحَدٍ مِنْهُم؛ وَلاَ نَتَبَرَّأُ مِنْ أَحَدٍ مِنْهُم، وَنُبْغِضُ مَنْ يُبْغِضُهُم، وَبِغَيْرِ الخَيْرِ يَذْكُرُهُم، ولا نُذْكُرُهُم إِلاَّ بِخَيْرٍ, وَحُبُّهُم دِينٌ وإيمَانٌ وإحْسَانٌ، وَبُغْضُهُم كُفْرٌ ونِفَاقٌ وطُغْيَانٌ. وَنُثْبِتُ الْخِلافَةَ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ أَوَّلاً لأَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ َفْضِيلاً لَهُ وَتَقْدِيمًا عَلَى جَمِيعِ الأُمَّةِ، ثُمَّ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ، ثُمَّ لِعُثْمَانَ ، ثُمَّ لِعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، وَهُمُ الْخُلَفَاءُ الرَّاشِدُونَ وَالأَئِمَّةُ الْمَهْدِيُّونَ. وَإِنَّ الْعَشَرَةَ الَّذِينَ سَمَّاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَشَّرَهُمْ بِالْجَنَّةِ، نَشْهَدُ لَهُمْ بِالْجَنَّةِ عَلَى مَا شَهِدَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، وَقَوْلُهُ الْحَقُّ، وَهُمْ: أَبُو بَكْرٍ، وَعُمَرُ، وَعُثْمَانُ، وَعَلِيٌّ، وَطَلْحَةُ، وَالزُّبَيْرُ، وَسَعْدٌ، وَسَعِيدٌ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ، وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ وَهُوَ أَمِينُ هَذِهِ الأُمَّةِ . وَمَنْ أَحْسَنَ الْقَوْلَ فِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَأَزْوَاجِهِ الطَّاهِرَاتِ مِنْ كُلِّ دَنَسٍ، وَذُرِّيَّاتِهِ الْمُقَدَّسِينَ مِنْ كُلِّ رِجْسٍ؛ فَقَدْ بَرِئَ مِنَ النِّفَاقِ. وَعُلَمَاءُ السَّلَفِ مِنَ السَّابِقِينَ، وَمَنْ بَعْدَهُمْ مِنَ التَّابِعِينَ -أَهْلُ الْخَيْرِ وَالأَثَرِ، وَأَهْلُ الْفِقْهِ وَالنَّظَرِ-، لا يُذْكَرُونَ إِلاَّ بِالْجَمِيلِ، وَمَنْ ذَكَرَهُمْ بِسُوءٍ فَهُوَ عَلَى غَيْرِ السَّبِيلِ.
এটাই আমাদের আকিদা।  
★★★
৪.৩. তানকীদের ভুল ব্যাখ্যা ও অভিযোগের পাহাড় 
তানকীদ শব্দের দুটি অর্থ আছে। ১. যাচাই বাছাই করা ২. সমালোচনা বা দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা। আশ্চর্য বিষয় হলো আল্লামা মওদূদী রহ. কোথাও তানকীদ শব্দটিকে সমালোচনা বা দোষত্রটি অন্বেষণ অর্থে নেন নাই। তিনি নিজে বলেছেন, এই শব্দ দ্বারা যাচাই-বাছাই করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সাহাবা আজমাঈনের কথা ও কাজও রাসূল আকরাস সা. এর ওহীর আলোকে তথা মিয়ারে হকের আলোকে যাচাই করে নিতে হবে। 
এটা কি নতুন কিছু? ফিকহি কিতাবগুলোতে কি সাহাবাদের কথাও রাসূল সা. এর মাধ্যমে যাচাই করা হয় না? কয়েকটি উদাহরণ দেখুন।  তবে তার আগে কুরআন ও সুন্নাহ তানকীদ তথা যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কি বলছে?
★★★
৪.৩.১. ১. দোষত্রুটি ঘোঁজা দুষণীয় এবং গুনাহ
একথা মওদূদী নিজেও বলেছেন যে, সাহাবা আজমাঈনের দোষ খোঁজা তো দূরের কথা, সাধারণ কোন মানুষেরই তো দোষ ত্রুট খুঁজে বেড়ানো এবং বলে বেড়ানো কবিরা গুনাহ। এটা তো গীবত। 
কোন সাহাবীদের দোষ খোঁজা যাবে না। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, আমীরে মুয়াবিয়া রা. এর ব্যাপারে কি করেছেন? 
সহজ উত্তর- তিনি আমীরে মুয়াবিয়া রা. এর সাহাবাত নিয়ে, ঈমান নিয়ে, আমল নিয়ে কোন কথা বলেছেন কি? যতটুকু কথা ইতিহাসে ও কিতাবে আছে, সেগুলোই তিনি পুনরুল্লেখ করে আমিরে মুয়াবিয়া রা. এর রাজনৈতিক কার্যক্রমকে যাচাই করেছেন। যদি এই সংক্রান্ত ইতিহাস আপনি অন্যান্য যায়গায় বা হাদীসের গ্রন্থে ও আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে পড়ে থাকেন, তাহলে আর দোষোরোপ করবেন না। 
★★★
৪.৩.১.২ আল্লাহ ও রাসূল সা. এর হুকুম/কথা যাচাই করা যাবে না- 
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا (আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।)
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا (অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।
উপরোক্ত দলিলে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা. ব্যতিত অন্য কারো কথা যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না। আরও অন্যভাবে বললে বলা যায়, একমাত্র নিরঙ্কুশ আনুগত্যের অধিকার শুধু আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা. রাখেন। অন্যে কেউ না। 
এখানে যদি কেউ এই কথা বলে যে, রাসূল সা. এর ইজতেহাদি ভুলের কারণে তাকে নিরঙ্কুশ আনুগত্য করা যাবে না, তাহলে সে এই দুই আয়াতকে অস্বীকার করল। [আলী হাসান উসামা গত লাইভে বলেছেন]
★★★
৪.৩.১.৩ নিরঙ্কুশ আনুগত্য শুধু আল্লাহ ও তার রাসূল সা. এর
مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ (যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল) নিসা-৮০
 وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا (আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।) নিসা-৬১
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ (বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ- فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِر- ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا (হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।) 
এই আয়াতে অন্যদের আনুগত্যের ব্যাপারে কন্ডিশান দিয়ে দিয়েছে।  আনুগত্য ততক্ষণ, সত্যের উপরে যতক্ষণ। সত্য নিয়ে বিরোধ বাঁধলে আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানেও নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর রাসূলকেই (সা.) মিয়ারে হক তথা সত্যের মাপকাঠি তথা সত্যের পরিমাপক বানানো হয়েছে। 
★★★
৪.৪. তানকীদ তথা যাচাইয়ের কয়েকটি উদাহরণ
৪.৪.১. হজ্জ্বে তামাত্তু এর ঘটনা 
 حدثنا عبد بن حميد أخبرني يعقوب بن إبراهيم بن سعد حدثنا أبي عن صالح بن كيسان عن ابن شهاب أن سالم بن عبد الله حدثه أنه سمع رجلا من أهل الشام وهو يسأل عبد الله بن عمر عن التمتع بالعمرة إلى الحج فقال عبد الله بن عمر هي حلال فقال الشامي إن أباك قد نهى عنها فقال عبد الله بن عمر أرأيت إن كان أبي نهى عنها وصنعها رسول الله صلى الله عليه وسلم أأمر أبي نتبع أم أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال الرجل بل أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال لقد صنعها رسول الله صلى الله عليه وسلم
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজ্জের সঙ্গে একত্র করে তামাত্তু করা সম্পর্কে তিনি জনৈক সিরিয়াবাসী ব্যক্তিকে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এর কাছে প্রশ্ন করতে শুনেছেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, তা করা বৈধ। সিরিয়াবাসী ব্যক্তিটি বলল, আপনার পিতা তো তা করতে নিষেধ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, তুমি কি মনে কর, কোন বিষয় যদি আমার পিতা নিষেধ করেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে কি আমার পিতার অনুসরণ করা হবে, না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করা হবে? লোকটি বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাজেরই তো (অনুসরণ করা হবে)। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (তামাত্তু) করেছেন।
যাচাই : ওমর রা. এর কথাকেও রাসূল সা. এর হাদীস দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। 
★★★
৪.৪.২ কিনতারের ঘটনা
মহিলাদের অধিক মোহর না দেয়ার ব্যাপারে উমর রা. এর বক্তব্যের তীব্র বিরোধীতা করেছেন একজন নারী। তিনি কিনতারের আয়াত উপস্থাপন করে বলেছেন। 
যাচাই : ওমর রা. এর কথাকে কুরআন দ্বারা যাচাই করা হয়েছে। 
৪.৪.৩. আমিরে মুয়াবিয়া রা. এর সময়কার কাজ
আমিরে মুয়াবিয়া রা. এর সময়কার অনেকগুলো কাজ যা ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. বাতিল করেছিলেন। যেমন কাফিরের ওয়ারিসে হওয়া ইত্যদী। 
★★★
৫. কয়েকটি দলিলের উপর প্রশ্ন- 
৫.১. আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপরে রয়েছি।
ما أنا عليه وأصحابي এই হাদীস দিয়ে দলিল দেয়া হয় যে, সাহাবা আজমাঈনও মিয়ারে হক। 
কিভাবে মিয়ারে হক হলো? রাসূল সা. এর কথা দিয়ে! কার কথা? রাসূল সা. এর কথা! 
প্রত্যেক সাহাবীকে বলা হয়েছে? না, সাহাবীদের জামায়াতকে বলা হয়েছে। 
ফলাফল- সত্যায়ন কে করল ভাই? জামায়াতে আসহাব তো আমাদের জন্য দলীল। একথা কি কেউ অস্বীকার করে? 
★★★
৫.২. فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا
অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত। এখানে সাহাবাদের মতো ঈমান আনতে বলা হয়েছে। সুতরাং সাহাবারা মিয়ারে হক বা ঈমান আনার ক্ষেত্রে মাপকাঠি। 
কিভাবে? সাহাবাদের ঈমানকে কে সত্যায়ন করল? কুরআন। 
মিছাল কখনও আসল হতে পারে কি? অর্থাৎ মিছাল কখনও মাপকাঠি হতে পারে কি? মিছাল তো মাপকাঠি দিয়েই তৈরি হয় নাকি? 
উদাহরণ- দর্জির কাছে একটি জুব্বা নিয়ে বললেন, এটার মতো করে বানাতে। এখন জুব্বাটাকে বললেন মাপকাঠি। হলো? হলো না তো! কারণ মাপকাঠি তো আপনি! আপনার গায়ের মাপে বানানো জুব্বা। 
ফলাফল- এর দ্বারা মিয়ারে হক হলো না। এখানে কোন একক সাহাবীকে বলা হয় নাই, জামায়াত বদ্ধ সাহাবীকে বলা হয়েছে। 
★★★
৫.৩. اصحابي كالنجوم 
আমার সাহাবীরা তারকার মতো, ...............?? 
مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ (রাসূল সা. বলছেন) যে ব্যক্তি আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করল, সে তার স্থান জাহান্নামে তৈরি করল। 
আকাবীরদের সকল কিতাবে দলিল হিসেবে এই মাউজু তথা বানোয়াট তথা জাল হাদীসটি দিয়ে দলিল দেয়া হয়। এটার খন্ডন করার দরকার আছে কি? 
ফলাফল- যারা প্রচার করেছে, তওবা করে নাই, তাদের স্থান জাহান্নাম। 
★★★
৫.৪ فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
আমার ও আমার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত তোমরা গ্রহণ করো। তোমরা সে সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। -তিরমিযী, আহমদ
এটা শেষ রক্ষা করার মতো হাদীস। অথচ দেখুন কে সত্যায়ন করছে? রাসূল সা. এর কথার মাধ্যমে। কাদের কথা বলা হচ্ছে? চার খলিফার কথা। কেন? খিলাফাত তো ১০০ বছর আগে পর্যন্ত ছিল। বাকি খলিফারা কেন না? কার কথায়? কি অপরাধে? এমনকি মুয়াবিয়া রা. কে কেন খলিফা বলেন না? কেন আমিরে মুয়াবিয়া রা. বলা হয়? 
খুলাফা কি একবচন? অবশ্যই না। এভাবে যত জায়গায় সাহাবীদের অনুসরণ-অনুকরণকে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, সব জায়গাতেই বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। কোন একজন সাহাবীর মতকে বলা হয় নাই। 
★★★
৫.৫. "لا تجتمع أمتي على ضلالة"
আমার উম্মত ভুলের উপর একমত হবে না। এই হাদীসের ক্ষেত্রেও একই কথা।  কিভাবে মিয়ারে হক হলো? রাসূল সা. এর কথা দিয়ে! কার কথা? রাসূল সা. এর কথা! 
প্রত্যেক সাহাবীর মতামতই যাচাইযোগ্য। সম্মিলিত সাহাবীদের মত গ্রহণযোগ্য। তবে মিয়ারে হক না। কেন? আসাকরি এতক্ষণের আলোচনায় বুঝতে পেরেছেন। 
★★★
এই পর্বে আর লম্বা করা যাবে না। এটাই হয়তো অনেকে পড়বেন না। গত পর্বে দলিলগুলো অসারতা সংক্ষেপে তুলে ধরেছিলাম। বিরোধীমত নানান রকম কটুবাক্যে ও ব্যক্তি আক্রমণে জর্জরিত করেছে। এটা তাদের নোংরা হাতিয়ার। কিন্তু যখন বললাম, একটাকে অন্তত খন্ডন করুন। তখন কেউ করলেন না। 
যাইহোক, আজকের মূল আলোচ্য বিষয়, মিয়ারে হকের সঠিক পরিচয়। আশাকরি এতে বুঝতে আপনাদের অসুবিধা হবে না। 
★★★
[বি.দ্র.১. আমি নিজে এ ধরণের বিষয়ে বিতর্ক বা লেখালেখি করা চরমভাবে ঘৃণা করি। কিন্তু তারপরও এই বিষয়টায় বাধ্য হয়ে কলম ধরতে হয়েছে। ক্ষমা করবেন। 
বি.দ্র.২. আবুল কালাম আজাদ বাশার ভাইয়ের বিতর্ক না করার মতটা আমারও। ইলমি বিষয় আলোচনা করার বিষয়। অহংকার করার বিষয় না। অহংকার নিয়ে আশাকরি সকলেই জানেন। আল্লাহ ক্ষমা করুন। 
বি.দ্র.৩. কোন ব্যক্তি আক্রমণ করবেন না। পারলে ইলমি জবাব দিন। না পারলে মেনে নিন। না পারলে চুপ থাকুন এবং দলিল পোক্ত করুন। 
বি.দ্র.৪ আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই উসুলে শব্দের বাহার তৈরি করি  নাই। নাহু, সরফ, বালাগাত, ফাসাহাতের ভিতরে ঢুকি নাই। এটা আম জনতার জন্য লেখা। সাধারণের উপযুক্ত করে লিখেছি। ]

Post a Comment

0 Comments