Recent Tube

শায়েখ আলী হাসান উসামার বক্তব্যের ভুলভাল দলিলের জবাব ও সত্যের মাপকাঠি রাসূল সা. সাহাবাগণ নয় এর প্রমাণ-পর্ব-০১ (জবাবী পর্ব) ওমর ফারুক আব্দুল্লাহ।


শায়েখ আলী হাসান উসামার বক্তব্যের ভুলভাল দলিলের জবাব ও সত্যের মাপকাঠি রাসূল সা. সাহাবাগণ নয় এর প্রমাণ-পর্ব-০১ (জবাবী পর্ব) 
==============================
نحمده ونصلى على رسول لله وباسمه تعالي 
প্রথমেই বলে রাখি আমি এতো বড়ো কোন আলেম নই যে, তার বিরুদ্ধে কলম ধরব। তবে আমি ক্ষুদ্র কুরআন-সুন্নাহর পাঠক ও ছাত্র হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই। 

সকল সমস্যার মূলে হলো সত্য কোনটি  আর মাপকাঠি কি? এটা বুঝতে না পারা। যাইহোক, ঐ আলোচনাটা পরে আসবে। আপাতত কয়েকটি দলিলের জবাব দিলাম। 

✅ ✅ প্রথম দলিল :: 
শায়েখ উসামা শুরুতে যে হাদীসটি উল্লেখ করে সাহাবী (রা.) কে মিয়ারে হক বানাতে চেয়েছেন সেটি হলো- 
افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة، وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة، وستفترق هذه الأمة على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة، قيل: من هي يا رسول الله؟ قال: من كان على مثل ما أنا عليه وأصحابي. وفي بعض الروايات: هي الجماعة. رواه أبو داود والترمذي وابن ماجه والحاكم، وقال: صحيح على شرط مسلم.
অনুবাদ- ইয়াহূদিরা ৭১ দলে ও খ্রিস্টানেরা ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছে। আর অচিরেই আমার উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া তাদের প্রত্যেকেই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সেটি কোন দল? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বর্তমানে আমি এবং আমার সাহাবীরা যে মতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, যে দল এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। 

✅  বুঝতে যে ভুল করেছেন : 
এখানে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেছেন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত, এখানে জামায়াত মানে তো আর জামায়াত ইসলামী না, বরং সাহাবাদের জামায়াত বুঝানো হয়েছে। এখানে রাসূল সা চাইলে শুধু আহলে সুন্নাত বলতে পারতেন। সেটা না বলে জামায়াত বলেছেন, এর মানে হলো আমরা আল্লাহর রসূল সা. এবং জামায়াতে সাহাবাও মানদন্ড। 
এরপর উপরের হাদীসটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ما انا عليه واصحابه এই হাদীস থেকেও স্পষ্ট যে রাসূল সা. আমাদের জন্য মানদন্ড, তেমনি সাহাবা রা. ও আমাদের জন্য মানদন্ড। 

✅ জবাব- 
এই হাদীসটি অন্য আরেকটি রেওয়াতে এভাবে এসেছে.... فقال صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ : مَن كان على مِثلِ ما أنا عليه وأصحابِي 
এখানে  ما انا عليه واصحابه দ্বারা কোনভাবেই সাহাবাদেরকে মিয়ারে হক বা সত্যের মানদন্ড বলা হয় নাই। কিভাবে? এখানে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন নাই, ما انا واصحابه আমি ও আমার সাহাবীগণ। বরং বলেছেন ما انا عليه واصحابه অর্থাৎ আমি ও আমার সাহাবীগণ যে মতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। তার মানে সাহাবাগণও সেই হক্ক বা সত্যের উপরেই ছিলেন, যে হক্ব বা সত্য স্বয়ং আল্লাহ পাঠিয়েছেন তার নবীর মাধ্যমে।  এখানে রাসূল সা. ঐ বস্তুকেই হকের মাপকাঠি বলেছেন, যার উপর তিনি নিজে ছিলেন এবং তার অনুসারী উম্মাত সাহাবাগণও ছিলেন।  কিয়ামত পর্যন্ত যারা এই হক্বের উপর থাকবে, তারাই হবে মুক্তি প্রাপ্ত বা ফিরকায়ে নাজিয়া। যাদেরকে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ বলা হয়। কোন সাহাবী সেই হক্বের মানদন্ড নয়। 

এই রেওয়ায়েতটি দেখুন-  من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي “তারা সেই বস্তুর (হক্বের) উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগণ রয়েছি। এখানে উদ্দেশ্য সাহাবী নয়, বরং সেই মহাসত্য, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীজীর নিকট এসেছে।  এবার আসুন আল্লাহ কি বলেন দেখি- إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۖ  নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি।  নবী করীম সা. বলেছেন- انا رسول الله حقا واني جىئتكم بحق “নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর সত্য রাসূল এবং আমি তোমাদের নিকট সত্যসহকারে এসেছি”। 

✅✅ দ্বিতীয় দলিল :: 
✅ একটি আয়াতের ভুল প্রয়োগ 
এখানে উনি একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন- فَإِنْ آمَنُوا بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ ۖ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।– সূরা বাকারা- 137 

এখানেও তিনি বুঝতে ভুল করলেন। তিনি মনে করলেন, এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ সাহাবীদেরকে ঈমানের মানদন্ড বানিয়েছেন। অথচ এই কথাটা ছিল তখনকার সময়ে ইহুদি-কাফির-মুশরিক-মুনাফিকদের জন্য। বর্তমান সময়ের কেউই সাহাবাদের মতো ঈমান আনতে পারবে না। কারণ সাহাবারা নবীজী সা. চোখে দেখে ঈমান এনেছিলেন। এখন সেটা সম্ভব না। আমরা একটা হাদীসও জানি যে, রাসূল সা. বলেছেন, আবু বকরের ঈমান সম্পর্কে বলেছেন যে, যদি আবু বকরের ঈমান এক পাল্লায় রাখা হয় এবং গোটা উম্মতের ঈমান এক পাল্লায় হয়, তাহলে আবু বকরের ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। সুতরাং সাহাবাগণ রা. ঈমান আনায়নের ক্ষেত্রে নমুনা ছিলেন, মিয়ার ছিলেন না। নমুনা কখনও মাপকাঠি হতে পারে না। বরং নমুনা অনুযায়ী পণ্য মাপযন্ত্র দিয়ে মেপে দেয়া হয়। 

✅✅ তৃতীয় দলিল
✅ আরও একটি ভুল দলিল দিলেন- 
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا 
যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।– নিসা-১১৫ 
এখানে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, এখানে মু’মিনদের পথ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে বলতে সাহাবাদেরকে বুঝানো হয়েছে। এখানে আনুগত্যের ক্ষেত্রে উদাহরণ দেয়া হয়েছে সাহাবাদের আনুগত্যের পথকে। সাহাবাদের পথ তো সেটাই, যেটা হেদায়েতের পথ। আর হেদায়েতের পথ বা সাবিল দ্বারা কুরআন ও রাসূল সা. এর পথকেই বুঝানো হয়েছে। সাহাবারা তো নিজে কোন পথ তৈরি করেন নাই বরং তারা অনুসরণ করেছেন মাত্র। 

✅ ✅ চতুর্থ দলিল :: 
✅ তিনি এরপর দলীল দিলেন- নবীজীর হাদীস থেকে-
 فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ
আমার ও আমার পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত তোমরা গ্রহণ করো। তোমরা সে সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর। -তিরমিযী, আহমদ
এই হাদীস দিয়ে বললেন, রাসূর সা. বলেছেন, আমার সুন্নাতকেও ধর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকেও আঁকড়ে ধর। এখানে আলাদা করে বলার কারণ কি? এরপর তিনি খুলাফায়ে রাশেদীনের কিছু মাসয়ালার বর্ণনা দিলেন। যেমন খলিফা নির্বাচন, তিন তালাকের মাসয়ালা। 

✅জবাব- 
এই দলীলটা তাদের গোষ্ঠী সবসময় দেয় এবং অকাট্য প্রমাণ হিসেবে উপাস্থাপন করে। অথচ এই দলীলের যে হাদীস সেই হাদীসের সামনের অংশ কি বলছে? 
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ 
সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদ’আত এবং প্রতিটি বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা। 
এখন উনারা কি বলতে চান, চার খলিফা বিদআত করেছেন? অথবা উনারা কি বলতে চান, চার খলিফা আল্লাহর কুরআন ও রাসূল সা. এর কথার বাইরে গিয়ে নিজে শরীয়ত বানিয়েছেন? না, কখনও না। বরং তাদের চেয়ে কে বেশি কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে? 
আমি আরও একটা উদাহরণ দেই, আবু বকর রা. খলিফা থাকাকালীন যাকাত দিতে অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু কেন? 

এখানে খলিফাগণ কখনও নিজের মনমতো শরীয়ত তৈরি করেননি। বরং তারা তো রাসূল সা. এর সুন্নাত থেকে ইজতেহাদ করে সেই মোতাবেকই রায় দিয়েছেন। অর্থা রাসূলের যুগ এমন অনেক সুন্নাহ অপ্রকাশিত ছিল, যা খলিফাদের যুগে প্রকাশিত হয়েছে। (মিরকাত গ্রন্থে মিশকাত কিতাবের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আছে। ইলমী আলোচনা বিধায় সংক্ষেপ করলাম) 

এছাড়াও নবী সা. বলেছেন- من احدث فى امرنا هذا ما ليس منه فعو رد যে আমার এ দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে, তা প্রত্যাখ্যাত ও বাতিল হবে। 
আরও বলেন- فمن لم يعمل بسنتي فليس مني যে আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মাত নয়। আরও বলেন- امتي من استن بسنتي আমার উম্মত সে, আমার সুন্নাত অনুসরণ করে যে। 

✅ ✅ পঞ্চম দলিল :: 
✅ পরবর্তী দলিল পেশ ও জবাব-
এখানে বেশ কিছু কথা এমন ছিল যা এভাবে আম পাবলিকে বলা যায় না। ইলমি বিষয়। এরপর তিনি যে আয়াত পেশ করেছেন- 
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। তাওবা-100

এই আয়াত পেশ করে বললেন, এই সবচেয়ে বড় পুরষ্কার দিয়ে দিচ্ছেন সাহাবীদের অনুসরণ করার পর। এখানে কোন কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের কথা বলা হয় নাই। এর দ্বারা স্পষ্ট যে, সাহাবারা সত্যের মাপকাঠি। 

✅ জবাব- 
এখানে নিরঙ্কুশ অনুসরণে র কথা বলা হয় নাই। বরং বলা হয়েছে বিইহসানা, অর্থাৎ ইহসান (তথা সঠিক) এর সাথে তাদের অনুসরণ করে। এর অর্থ হচ্ছে, বিশুদ্ধ ঈমানের সাথে সাহাবাদেরকে সৎকাজের অনুসরণ করতে হবে। এখন সৎ কাজ আর অসৎ কাজ পরিমাপ করবেন কি দিয়ে? অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ। তাহলে মিয়ারে হক কি সাহাবারা রা. রইল? 
একটা দীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষ দিলাম- لا طاعة فى معصية الله انما الطاعة فى المعروف আল্লাহর নাফারমানীতে কোন সৃষ্টির আনুগত্য চলেবে না, আনুগত্য তো কেবল ভাল কাজের- আহমদ

আসুন সাহাবী সম্পর্কে আরেকটি আয়াত দেখি। আল্লাহ বলেন- 
উপরোক্ত আয়াতের পরেই আল্লাহ বলেন- وَآخَرُونَ اعْتَرَفُوا بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُوا عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا عَسَى اللَّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ  আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়। তাওবা-102

সূরা আলে ইমরানের ১৩৫-১৩৬ নং আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন- 
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ ‎- أُولَٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ 
তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। -- তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।

সত্য তো কখনও আংশিক অনুসরণযোগ্য হয় না। সত্যের মাপকাঠি যদি ভুল করে, তাহলে সে মাপকাঠি কিভাবে হয়? উপরোক্ত দুটি আয়াতে তো সাহাবাদের কথাই বলা হচ্ছে। তারা ভুল করেছেন, পাপ করেছেন আবার ক্ষমা পেয়ে জান্নাতের সুসংবাদও পেয়েছেন। কিন্তু তারা সত্যের মাপকাঠি নয়, বরং সত্যের মাপকাঠিতে তারা উত্তীর্ণ হয়েছে। 

✅✅  ষষ্ঠ দলিল :: 
✅ একটি ভুল আয়াতের প্রয়োগ ও ধুর্তামি-
আবুল কালাম আজাদ বাশার সাহেবের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শাইখ আলী হাসান উসামা সাহেব একটি বড় গোজামিল করেছেন। আল্লাহ বলেন-
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।– সূরা নিসা-৫৯ 

এখানে সূরা নিসার আয়াত উল্লেখ করে বাশার সাহেব জানতে চেয়েছিলেন যে, বিবাদ লাগলে তো আল্লাহ ও তার রাসূল সা. এর কাছে যেতে বলা হয়েছে। সাহাবাদের কথা বলা হয় নাই। করণ সত্য নিয়ে সমস্যা হলে ফায়সালা নিতে তো মাপকাঠির কাছেই যেতে হয়। এর জবাব দিতে গিলে উসামা সাহেব আয়াত টেনেছেন- 
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ
আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। 

উসামা সাহেব বললেন- এই আয়াতে তো উলিল আমরের কাছে যেতে বলা হয়েছে। অথচ এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে এবং একটি বিশেষ নিয়মের কথা বলা হয়েছে। সত্য অনুসনন্ধানের জন্য নয়। এখানে যুদ্ধ কালীন বা জরুরী অবস্থা কালীন সময়ে বিভিন্ন সংবাদ আসত, যা ছিল যুদ্ধ সংক্রান্ত ভীতিকর বা শান্তিমূলক। সেই সংবাদগুলো যারা বাহক ছিল, তারা সরাসরি লোকদের মাঝে বলে বেড়াতে লাগল। এতে করে সমস্যা তৈরি হলো। এই জন্য বলা হয়েছে যে, খবরগুলো আল্লাহর রাসূল বা দায়িত্বশীলদের নিকট পৌঁছে দিলে ভালো করত। কিছুটা সেনা চেইন অব কমান্ডের মতো। এখানে এজন্য আল্লাহর কথা উল্লেখ নাই। কারণ এখানে হক নিয়ে কোন দ্বন্দের কথা বলা হয় নাই। 

আর উপরোক্ত সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে হক নিয়ে দ্বন্দের কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর এবং তার রাসূল সা. অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর নিকট ফিরে যেতে বলা হয়েছে। এটার সাথে উসামা সাহেবের আয়াতের কোনই মিল নেই। এটাকে স্রেফ ধুর্তামি বলে। 

✅ ✅ সপ্তম দলিল 
✅ আল্লাহর রাসূল সা. এর ভুল এবং সূরা নাসরের ব্যাখ্যা- 
এই উসামা গংরাই সূরা নাসরে আল্লামা মওদূদী রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেছেন-  یعنی اپنے رب سے دعا مانگو کہ جو خدمت اُس نے تمہارے سپرد کی تھی اُس کو انجام دینے میں تم سے جو بھول چوک یا کوتاہی بھی ہوئی ہو اُس سے چشم پوشی اور درگزر فرمائے
অর্থাৎ তোমার রবের কাছে দোয়া করো। তিনি তোমাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করতে গিয়ে তোমার যে ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা যেন তিনি মাফ করে দেন।
এতে মওদূদীকে কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। নবী বিদ্বেষী বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আরও কত কথা। অথচ আজ উসামা সাহেব নিজেই নবীজী নির্ভুল নন, এই ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন, নবীজী ভুল করেছেন এবং আল্লাহ পরে সংশোধন করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভুল হওয়া যদি মাপকাঠি না হওয়ার দলিল হয়, তাহলে নবীজীও তো মাপকাঠি হবে না। এরপর তিনি এও বলেছেন যে, সাহাবারা যদি সত্যের মাপকাঠি না হয়, তাহলে রাসূলের কি দরকার ছিল? কুরআন আসলেই তো হতো! এখানেই হলো বুঝের সমস্যা।  আর এই বুঝ নিয়ে এতোদিন মওদূদী “জো ভুল চুক” কথাটা বলায় কাফির ফতোয়া দিয়ে রেখেছে এই কওমী অঙ্গন। আর আজ এরাও বলছে, নবীজীর ভুল হয়েছে এবং তাও জোরালো কণ্ঠে। 

✅✅অষ্টম দলিলে নিজের জালে নিজে ধরা- 
✅ হযরত আলী রা. এর উক্তি- 
শেষের দিকে এসে উসামা সাহেব হযরত আলী রা. এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। - لا تعرف الحق بالرجال اعرف الحق تعرف أهله
এখানেই তো তিনি ব্যক্তি দিয়ে হক চেনাকে বাতিল করে দিলেন। এর দ্বারা তো সাহাবারা ”হকের মাপকাঠি” এই তত্ব বাদ হয়ে যায়। রাসূল সা. ওহীর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কারণে রাসূল সা.ই একমাত্র মাপকাঠি হয়ে যায়। (মূলত রাসূল সা. বলতে কুরআন ও সুন্নাহ তথা ওহীকে বুঝানো হয়)। আদালতে সাহাবা বা হুজ্জতে সাহাবাকে “মিয়ারে হক” বানালে তো হবে না। আগে তো হক্ব চিনতে হবে। 

আরও এমন অনেক কথা আছে, যা পাবলিক প্লেসে বলা উচিৎ না বিধায় নিয়ে আসলাম না। বিষয় হলো, আগে হক বুঝুন। তারপর মিয়ারে হক বুঝবেন। হক না চিনেই লাফালাফি করলে হবে কি করে? 
আর এগুলো তো পুরোনো আকাবিরদেও অভ্যাস। তাদেরকে আকাবির হুসাইন আহমেদ মাদানী রহ. তো ভুল দিয়েই কিতাব লেখা শুরু করেছেন। রাসূল ছাড়া অন্য কেউ মিয়ারে হক হবে না, এই কথা বলে নাকি মওদূদী অন্য নবীদেরকেও মিয়ারে হক না হওয়ার কথা বলছেন। নাউজুবিল্লাহ! কথা হচ্ছে শরয়ী মুহাম্মাদ নিয়ে। এখানে অন্য নবী কেন আসবে? 
ভাই উসামা, আপনি অবশ্যই তরুন একজন ভালো আলেম। তাই অনুরোধ করছি, “সংকীর্ণ চিন্তা থেকে বের হয়ে উম্মাহ চিন্তা ও জ্ঞান সাগরের গভীরে ডুব দিন।” শুধু আরবী ব্যকরণ আর উসুলে ফিকহ ভালো জানলে কুরআনের তাদাব্বুর আসে না ভাই। ভাইরাল টপিকে আলোচনার চিন্তা ফেলে দিয়ে গভীর পড়াশুনা করুন। জাতির খরচেই তো বড় হয়েছেন, এবার জাতিকেও কিছু দেয়ার চেষ্টা করুন। 

28.02.2024
সুবহে সাদিক

Post a Comment

0 Comments