দেওবন্দী আলেমগণও সাহাবিগণকে 'মিয়ারে হক' বা সত্যের মাপকাঠি মানেন না/হেফাজতের ফতোয়ায় তাদের আকাবিরগণও কি কাফির নয়?
(১) নুদওয়াতুল মুসান্নিফিন -এর সদস্য এবং দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম উস্তাদ মাওলানা বদরে আলম মদনী (রাহঃ) তাঁর গ্রন্থ তরজুমানুস সুন্নাহ-তে বলেন,
"রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফায়সালা ছাড়া আর কারো ফায়সালাকে আল্লাহর ফায়সালা বা হুকুম বলা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা ছাড়া অপর কোনো মানুষের ফায়সালা সমালোচনার ঊর্ধে হতে পারে না। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া প্রতিটি লোকের সিদ্ধান্তকে সর্বান্তকরণে স্বীকার করে নেওয়া অনিবার্য রূপে গণ্য করা সম্ভব নয়।" (তরজুমানুস সুন্নাহ, খন্ড ৩য়, পৃঃ ৪২৬)
.
(২) শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী বলেনঃ "যখন এটা সাহাবীদের কর্ম, তখন সেটা হুজ্জাহ/দলীল নয়।" (তাকারীর শাইখুল হিন্দ পৃঃ৩০)
তিনি আরো বলেনঃ "এটা একটি সাহাবীর কথা, এটি হানাফীদের জন্য দলীল হতে পারে না।" (তাকারির শাইখুল হিন্দ পৃঃ৪৩)
.
(৩) আল্লামা যাফর আহমেদ থানভী দেওবন্দী বলেনঃ "(রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাওল) মারফূ হাদীসের মুকাবিলায় সাহাবীদের কওল দলীল হয় না।" (ইলাউস সুনান:১/৪৬৩)
.
(৪) সায়েদেনা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ফজরে দোয়ায়ে কুনুত পড়ত , তো এ ব্যাপারে শাইখুল হাদীস ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ "এই রেওয়াত মওকূফ সুতরাং এ দ্বারা দলীল হবে না।" (দারসে তিরমিযী ২/১৬৯)
.
(৫) ত্বকী উসমানী সাহেব আরো বলেনঃ
"প্রথমত এটা আবু হুরাইরা (রাঃ) এর ব্যাক্তিগত ইজতেহাদি আমল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মারফু হাদীসের সামনে এটি হুজ্জাত নয়।" (দারসে তিরমিযী ২/৮৪)
.
(৬) ত্বকী উসমানী দেওবন্দী বলেনঃ
"এবার রয়ে গেলো শুধু হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আছার। এর জবাব হলো, প্রথমতো এতে প্রচন্ড ইজতেরাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত যদি এটাকে সূত্রগতভাবে সহীহ মেনেও নেওয়া হয় তবুও এটি একজন সাহাবীর ইজতিহাদ হতে পারে, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মারফূ হাদীসের বিপরীতে প্রমাণ নয়।" (দারসে তিরমিযী ১/২৮৩)
৭) তিনি আরো বলেনঃ
"বাকি রইলো দ্বিতীয় সূত্রটি। সেটিও সহীহ। তবে এর দ্বারাও শাফেয়ি মতাবলম্বী প্রমুখের মাজহাবের ওপর কোনো স্পষ্ট মারফু দলিল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেনো না, এটা হজরত উবাদা (রাঃ) এর নিজস্ব ইজতিহাদ।
অর্থাৎ তিনি
لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.
বিশিষ্ট হাদীসটীকে ইমাম এবং মুক্তাদীর উভয়ের জন্য ব্যাপক মনে করেছেন। এর ফলে এই হুকুম উৎসারণ করেছেন যে, মুক্তাদির উপর সূরা ফাতেহা পড়া আবশ্যক। তবে তার এ উৎসারণ মারফু হাদীসগুলোর বিপরীতে দলীল হতে পারে না।" (দারসে তিরমযী ২/৭৫)
.
(৮) সারফারায খান সাফদার দেওবন্দী সাহেব লেখেনঃ "(রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর) মারফু হাদীসের বিরোধীতায় (সাহাবাগণ এর) মাওকূফ হাদীস কোনো দলীল নয়।" (খাযাইন আস-সুন্নাহ (১/১৭৯)
.
(৯) ইমাম বুখারী (রহঃ) সায়েদেনা আনাস (রাঃ), হাসান বসরী এবং কাতাদা (রহঃ) এর কওল নকল করেছেন যে সেজদা সাহু এর পরে তাশাহুদ হবে না। দেখুন, (সহীহ বুখারী খন্ড ১ পৃঃ১৬৩)।
কিন্তু সারফারায সাফদার দেওবন্দী সাহেব বলেনঃ "ইমাম বুখারী (রহঃ) এর এই ইস্তেদলাল খুবই দুর্বল কারণ এটা মাউকূফ এবং (রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে) তার বিরোধীতায় সারীহ, সহীহ, মারফু রেওয়াত আছে, এগুলোর বিরোধীতায় (সাহাবাগণ এর) মঊকূফ রেওয়াত দিয়ে কি হবে?" (খাযাইন আস-সুনান ২/১৪৩)
.
(১০) খলীল আহমেদ সাহারানপুরী দেওবন্দী বলেনঃ "আর এটা একজন সাহাবীর মাযহাব (মত, রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মত নয়) যেটা একজন ব্যাক্তির জন্যও দলীল নয়। (বাযলুল মাযহুদ ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩৯)
.
সম্মানীত পাঠক! লক্ষ্য করুন, দেওবন্দী আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছাড়া সাহাবাগণকেউ যাচাই-বাছাই এর ঊর্ধে মনে করেননি। তাই তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মতের সাথে না মিলার কারণে নির্দ্বিধায় তারা সাহাবাগণ (রা) এর মতের সমালোচনা করে প্রত্যাখ্যান করেছেন
প্রশ্ন হল- যাদের কথা দলিল হতে পারে না, যাদের কে যাচাইবাচাই করা হয় রাসূলুল্লাহ (সা) এর ভিত্তিতে, যাদের আমল মারফু হাদীসের বিরুদ্ধে গেলে মানা হয় না, তারা কি করে সত্যের মাপকাঠি হতে পারে?
সুুতরাং দেওবন্দী আলেমগণের দৃষ্টিতেও সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি নয় বরং সত্যের মাপকাঠি একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা)।
আর তাই তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাণী মারফু হাদীস কে প্রাধান্য দিয়েছেন, সাহাবাগণ (রা) এর বাণী মারফু হাদীসের বিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মাওলানা মওদূদী (রহ.) বলেছেন, সাহবিগণ মিয়ারে হক বা সত্যাের মাপকাঠি নয় বরং তাঁরা সত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ।
এ কথা বলার কারণে মাওলানা মওদূদী রহ যদি কাফির হয় তাহেলে একই মড পোষণকারী দেওবন্দী আলেমগণ কেন কাফির হবে না?
হেফাজতের নিকট কোন জবাব আছে?নেই।
0 Comments