কে বেঈমান? জামায়াত নাকি বিএনপি? জামায়াত ছাড়া বিএনপি কি পারবে সরকার গঠন করতে?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি প্রথম ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম প্রস্তাব করেন। তিনি একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ফর্মুলা তুলে ধরেন। অর্থাৎ, এই ধারণার "রূপকার" হিসেবে তিনিই পরিচিত।
........কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চুড়ান্ত রুপ নেয়।সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে এরশাদ সরকারের পক্ষে ভূমিকা রাখতে অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে এরশাদ ৬ ডিসেম্বর (১৯৯০) পদত্যাগ করলেন।
কেয়ারটেকার সরকার কায়েমের আন্দোলন সফল হলো। প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হাতে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হলেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি (১৯৯১) ঐ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ক্ষমতাসীন হয়।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে কয়টি আসন পেয়েছিল তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): ১৪০টি আসন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: ৮৮টি আসন
জাতীয় পার্টি: ৩৫টি আসন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: ১৮টি
১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসনে জয় লাভ করে বিএনপিকে সরকার গঠনে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।’
বিএনপির বিশ্বাসঘাতকতা ও রাজনৈতিক দূরত্ব: নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে।
বিএনপি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধর্মীয় শিক্ষা কারিকুলাম এবং কিছু আইন সংশোধনের মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। এই দূরত্ব উভয় দলের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করে।
কেয়ারটেকার-এর চতুর্থ পর্ব কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয় মূলত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মাগুরা-২ উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিরোধী দল কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া আর কোনো নির্বাচনে না যাবার ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় জুন মাসে বাজেট সেশনেই জামায়াতে ইসলামীর পার্লামেন্টারি পার্টির লিডার মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিকে শাসনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে সংসদে পেশ করার জন্য একটি বিল জমা দেন।
পরে ঐ বছরই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে এ উদ্দেশ্যে বিল জমা দেয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল এ বিষয়ে মোটেই আগ্রহী ছিল না। ফলে আবারো কেয়ারটেকার সরকার দাবিতে আন্দোলন করতে হলো।
জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকার দাবি নিয়ে ১০ বছর (১৯৮০ থেকে ১৯৯০) আন্দোলন করেছে। ১৯৯০ সালে বিএনপিও এ আন্দোলনে শরিক ছিল। কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির সুবাদেই তাঁরা ক্ষমতায় গেলেন।
অথচ এ পদ্ধতিটি সংসদে আলোচনা পর্যন্ত করতে দিলো না। ফলে আন্দোলন হলো এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি সরকার কেয়ারটেকারের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে তা যুক্ত করে। এর পরবর্তী পর্যায়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।
১] বিএনপি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ধর্মীয় শিক্ষা কারিকুলাম এবং কিছু আইন সংশোধনের মতো বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। এই দূরত্ব উভয় দলের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করে।
২] ১৯৯০ সালে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপিও এ আন্দোলনে শরিক ছিল। কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির সুবাদেই তাঁরা ক্ষমতায় গেল।
অথচ এ পদ্ধতিটি সংসদে আলোচনা পর্যন্ত করতে দিলো না। ফলে আন্দোলন হলো এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি সরকার কেয়ারটেকারের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে তা যুক্ত করে।
বিএনপির জামায়াত আলাদা হল।এর পরবর্তী পর্যায়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচন। জামায়াত বিএনপির আলাদা হয়ে যাওয়ার ফসল ঘরে তুলো আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।
বিএনপি জামায়াত জোট ছাড়া নির্বাচন
১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: ১৪৬টি আসন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): ১১৬টি আসন।
জাতীয় পার্টি: ৩২টি আসন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: ৩টি আসন।
ইসলামী ঐক্যজোট: ১টি আসন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব): ১টি আসন।
অন্যান্য: ১টি আসন।
জোটে নির্বাচন
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): ১৯৩টি আসন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: ৬২টি আসন।
ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: ১৪টি আসন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: ১৭টি আসন।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নাজিউর): ৪টি আসন।
ইসলামী ঐক্যজোট: ২টি আসন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ: ১টি আসন।
জাতীয় পার্টি (মঞ্জু): ১টি আসন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবেে প্রমাণিত হয়
৯১ সালে জামায়াতের নিঃশর্ত সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে স্বৈরাচার হয়ে উঠার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যাবস্থা বাতিল করে দেয়।মাগুরার উপ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে।
বেঈমান কে?
জোট ছাড়া বিএনপি কি পারবে আগামীতে সরকার গঠন করতে? ৯১ -৯৬ ও ২০০১ সালের ফলাফল স্পষ্ট বলে দিচ্ছে জামায়াত ছাড়া বিএনপি সরকার গঠন করত পারবে না।
আর পারবে না দেখেই বিএনপির আওয়ামী পূনর্বাসন ও ভারতের কোলে গিয়ে উঠা। কিন্তু বিএনপির এই ভারতের কোলে উঠা ও আওয়ামী পুনর্বাসন জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেই।
0 Comments