Recent Tube

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সেকুলার হওয়া কি সম্ভব: মূল লেখক: মাওলানা আবুল হাশেম মোল্লাসংযোজন ও সম্পাদনায়: তানজিল ইসলাম।


জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সেকুলার হওয়া কি সম্ভব:
------------------------------------
জামায়াতে ইসলামী সেকুলার হয়ে যাচ্ছে, সেকুলার হয়ে যাবে- কেউ কেউ এমন আশংকা প্রকাশ করছেন। আমার ২০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, মূলত বিদ্যমান কাঠামো অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর সেকুলার হওয়া অসম্ভব।

১. আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন (বিধান) কায়েমের মাধ্যমে দুর্নীতি ও দুঃশাসন মুক্ত এবং ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মহৎ উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামী গঠন করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ঈমান ও আকিদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: 
★ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই মানব জাতির একমাত্র ইলাহ, বিধানদাতা ও হুকুমকর্তা।
★ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) মাবন জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য একমাত্র নেতা।
★ ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই মুমিন জীবনের লক্ষ্য।

২. কুরআন হাদীসের পাশাপাশি যে সকল ইসলামী বই পুস্তক পড়িয়ে জামায়াতের কর্মী, রুকন বানানো হয়, প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে (টিসি, টিএস, কর্মশালা, শব্বেদারী) যে আলোচ্য বিষয়গুলো থাকে, এগুলো যতদিন থাকবে ততদিন (১০০০ বছর গেলেও) জামায়াতের পক্ষে সেকুলার হওয়া অসম্ভব। কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে দলকে সেকুলার বানাতেও চায় (আল্লাহ না করুক), লক্ষ লক্ষ জনশক্তি প্রশিক্ষণের কারণে এমন মানসিকতায় গড়ে উঠছে তারাই ঐ সকল লোকদেরকে নাস্তানাবুদ করে ফেলবে।

৩. জামায়াতের লোকদের আমল আখলাকে ত্রুটি থাকতে পারে বা আছে। কিন্ত শুধু দুনিয়ার ধান্দার উদ্দেশ্যে জামায়াতের দায়িত্ব পালন করছে, পুরো জামায়াতের মধ্যে এমন সর্বোচ্চ ২-৪% জনশক্তি পাওয়াও দুষ্কর হবে। অতএব শুধু কারো ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে ক্ষমতার লোভে কেউ যদি সেকুলার হতে চায় (অর্থাৎ যে করেই হোক ক্ষমতা লাগবেই) বাকি ৯৬-৯৮% জনশক্তির রোষানলে তারা জামায়াত ত্যাগ করে বাঁচা ছাড়া বিকল্প কিছু থাকবে না।

৪. জামায়াতের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের একটা বড় অংশ কোন না কোনভাবেই শিশু কিশোর কাল থেকে দীনি পরিবেশ (পারিবারিক, সামাজিক) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। একেবারে পূর্ণ ইসলাম বিদ্বেষী মানসিকতা থেকে এসে জামায়াতের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন এ সংখ্যাটা পাওয়া অসম্ভবপ্রায়। অতএব যারা 50/60 বছর ধরে দীনের মিনিমাম মূল্যবোধ রক্ষা করে চলছেন (তাদের কেউ কেউ জামায়াতের রানিং দায়িত্বও পালন করছেন) তাদের হাতে জামায়াত সেকুলার হবে এটা মোটেই সম্ভব নয়।

৫. শরীয়াতের বিধান পালনের দিক থেকে দুটি প্র্যাকটিস আছে। একটা আযীমাত অপরটা রুখসাত। জামায়াতের একটা বড় অংশ রুখসাত নীতি ফলো করে থাকেন। কিন্ত জামায়াতের প্রতি টায়ারে সিদ্ধান্তমূলক বডিতে এমন কিছু দায়িত্বশীল আছেন যারা আযীমাত নীতির ব্যাপারে খুবই নাছোড়বান্দা। প্রয়োজনে জীবন দেবে কিন্তু ইসলাম ছাড়বে না। উনাদেরকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন দিকে যাওয়া মানে ছোট খাট কিয়ামাত ঘটার উপক্রম হবে।

৬. ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সাহেব পদত্যাগের পর তাঁর একটা সাক্ষাৎকার আপনাদের কারো কারো মনে থাকার কথা। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার এ মতামতগুলো কি বডিতে তুলে ধরেননি? তিনি বলেছিলেন, "জামায়াত তার অভ্যন্তরে খুব গণতন্ত্র চর্চা করে থাকে, আমার মতের পক্ষে লোক ছিল না এমন নয়, কিন্ত কখনোই আমি অধিকাংশ সদস্যকে আমার মতের পক্ষে আনতে পারিনি, সে জন্য আমার দাবি পাশও হয়নি।"

৭. এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু জামায়াতে ইসলামীতে থাকাকালে ইসলামী রাজনীতি ত্যাগ করে গণমুখী (সেকুলার) রাজনীতির জন্য সংস্কারের প্রস্তাব করলে জামায়াত তাকে বহিষ্কার করে। বহিষ্কারের পর সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, জামায়াত একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল আবার ইসলামিক দলও। একটা ইসলামিক দল যখন ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করে, তখন সেটা সাংঘর্ষিক হয়। জামায়াতের মূল বক্তব্য হলো, ‘মানব রচিত মতবাদ হলো হারাম’।

খেয়াল করুন, আপনি কি মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর যে নির্বাহী পরিষদ 'ফোরামে সেকুলার রাজনীতি করার প্রস্তাব' দেওয়ার অপরাধে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে পারে, সে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ দুনিয়ার লোভে সেকুলার হয়ে যাবেন? আপনার যদি এতটুকু আস্থাই না থাকে আপনার তো এ জামায়াতে যুক্ত থাকাই অপরাধ। জামায়াতে ইসলামী জানে, দ্বীন বিজয়ের আন্দোলন করার জন্যই মানুষ জামায়াতে সামিল হয়েছে। এ পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে জামায়াত থেকে কর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে জামায়াত তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য পরিবর্তন করে কখনোই সেকুলার হবে না। 
আর যারা জামায়াতের সাথে সংযুক্ত নন, কিন্ত দীনি আবেগ থেকে জামায়াতের সেকুলার হওয়ার আশংকা প্রকাশ করছেন, তাদের সাথে কোন বিতর্কে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। তাদের সমালোচনাকে পজিটিভ হিসেবে গ্রহণ করুন। তাদের সাথে সম্পর্ক আরো বাড়িয়ে দেন, তাদেরকে হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসুন। আপনার কর্ম দেখেই উনাদের ভুল ভাঙবে, ইনশাআল্লাহ।

অতএব কথা নয়, কাজই হোক সর্বোত্তম জবাব।

মূল লেখক: মাওলানা আবুল হাশেম মোল্লা
সংযোজন ও সম্পাদনায়: তানজিল ইসলাম

Post a Comment

0 Comments