Recent Tube

আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর বিরুদ্ধে ত্বকী উসমানীর অভিযোগ, আমাদের জবাবঃ-৩: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

-----------------------------------------
     হযরত মুয়াবিয়া (রা) তাঁর শাসনামলে মুসলমানদের কাফিরের ওয়ারিছ নির্ধারিত করেছিলেন, যা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা) ও চার খলিফার সুন্নাতের বিপরীত নীতি। আর এই নীতিকে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ সুন্নাতের খিলাফ বলেছেন। পক্ষান্তরে ত্বকী উসমানী মুয়াবিয়া (রা) এই নীতিকে সুন্নাত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
এখান আমরা কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহর (হাদীসের) আলোকে প্রমাণ করব 'কোন মুসলমানকে কোন কাফিরের ওয়ারিছ নির্ধারণ করা' সুন্নাহ না কি সুন্নাহর পরিপন্থী?
.
কুরআনের আলোকে মুসলিম ও কাফিরের ওয়ারাছাত: 
---------------------------------------
     আল্লাহ তা'য়ালা রাসত সম্পর্কিত আইন শুধু মাত্র মুসলিমদের উদ্দেশ্যে নাযিল করেছেন। এ বিষয়ে আইন বর্ণনার শুরুতেই আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
يوصي كم الله 
"আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন।" 
 এতে বুঝা গেল এই আইন শুধু মুসলিমদের মধ্যেই কার্যকর হবে। একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ওয়ারিছ হতে পারবে। পক্ষান্তরে কোন মুসলিম কোন কাফিরের এবং কোন কাফির কোন মুসলিমের ওয়ারিছ হতে পারবে না। ওয়ারাছাত সম্পর্কীয় আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার সাথে মুসলিম ও কাফিরের মধ্যে ওয়ারিছ বিলুপ্ত হয়েগেছে। শুধু মাত্র এ সুযোগ রাখা হয়েছে যে, একজন মুসলিম আহলে কিতাবের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। 
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
.
وَٱلْمُحْصَنَٰتُ مِنَ ٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَٱلْمُحْصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَآ ءَاتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِىٓ أَخْدَانٍۗ وَمَن يَكْفُرْ بِٱلْإِيمَٰنِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ‌و وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ 
.
  মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্রা নারীদের সাথে তোমাদের বিবাহ বৈধ। যখন তোমরা তাদেরকে মোহর দেবে, বিবাহকারী হিসেবে, প্রকাশ্য ব্যভিচারকারী বা গোপনপত্নী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর যে ঈমানের সাথে কুফরী করবে, অবশ্যই তার আমল বরবাদ হবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা মায়িদাঃ৫)
.
 কিন্তু পবিত্র কুরআনে কোথাও বলা হয়নি কোন মুসলিম কাফিরের ওয়ারিছ হতে পারে। 
.
হাদীসের আলোকে মুসলিম ও কাফিরের ওয়ারাছাত: 
---------------------------------------
  ‘আবদুল্লাহ্  ইবন  ‘আমর  (রাঃ)  থেকে বর্ণিত।  তিনি বলেনঃ 
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ يَتَوَارَثُ أَهْلُ مِلَّتَيْنِ شَتَّى ‏"‏ ‏

.
  রাসূলূল্লাহ্  (সাঃ)  বলেছেন যে,  দুটি  ভিন্ন  মিল্লাতের  (জাতির)  অনুসারীরা  একে  অপরের  ওয়ারিছ  হতে  পারে না।
(সুনানে আবূ দাউদ, কিতাবুল ফারায়িয, হাদীস নং ২৯০১)

.
 উসামা  ইবন যায়দ  (রাঃ)  সূত্রে  নবী  (সাঃ)  থেকে বর্ণিত।

قَالَ ‏ "‏ لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ ‏"‏ ‏.‏
.
  রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ  কোন  মুসলমান  কোন  কাফিরের  ওয়ারিছ  হতে  পারে না  এবং  কোন  কাফিরও  কোন  মুসলমানের  ওয়ারিছ  হতে  পারে না।
[সুনানে আবূ দাউদ, কিতাবুল ফারাইয, হাদীস নং ২৮৯৯ ইফাবা। সনদ সহীহ]
.
হযরত উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। 
أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَرِثُ الْمُسْلِمُ الْكَافِرَ وَلاَ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ
.
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম কাফেরের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না আর কাফিরও মুসলিমের (ওয়ারিছ) উত্তরাধিকারী হয় না। 
[সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারায়িয, হাঃ৬৭৬৪; আধুনিক প্রকাশনী, হাঃ৬২৯৬, ইফাবা, হাঃ৬৩০৮;  সহীহ মুসলিম, হাঃ১৬১৪, মুসনাদে আহমাদ, হাঃ২১৮০৬]
.
সম্মানিত পাঠক! পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হলো যে, একজন কাফির যেমন কোন মুসলিমের ওয়ারিছ হতে পারে না, ঠিক তেমনি একজন মুসলিমও কাফিরের ওয়ারিছ হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা) এর সময় থেকে খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলের শেষ পর্যন্তু এ নীতিই চালু ছিল। সুতরাং মুয়াবিয়া (রা) কর্তৃক মুসলিমকে কাফিরের ওয়ারিছ নির্ধারণ করাকে আল্লামা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ যে, সুন্নাতের খেলাফ বলেছেন, তা কুরআন সুন্নাহর নির্দেশেরই প্রতিধ্বনি হয়েছে। আর এই (মুসলমানদের কাফিরের ওয়ারিছ নির্ধারণ করার) নীতিকে সুন্নাত বলার অর্থ হলো কুরআন হাদীসের সুস্পষ্ট বিরোধীতা করা।
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments