Recent Tube

আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের উপর আযাব নাযিল হওয়ার বিধানঃ Tanzil Islam ইসলামি চিন্তাবিদ ও লেখক।

আজ সারা বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের উপর নাযিল হওয়া এক সর্বগ্রাসী আযাব। এ ধরণের আযাব কেন আসে, এ বিষয়ে আমীরুল মু'মিনীন খলিফাতুল মুসলিমীন আবূ বাকর সিদ্দিক (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ 
إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ لَا يُغَيِّرُونَهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ 
"যখন লোকেরা অন্যায়-পাপ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তন বা সংশোধন করবে না তখন যে কোন মুহুর্তে আল্লাহর আযাব (শাস্তি) তাদের সবাইকে গ্রাস করবে।" (জামে তিরমিযী হাঃ ২১৬৮, ৩০৫৭, সুনান আবু দাউদ হাঃ ৪৩৩৮, সুনান ইবনে মাজাহ হাঃ ৪০০৫, মুসনাদে আহমদ হাঃ ০১, ১৭, ৫৪, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
.
পৃথিবীতে মানুষের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব নাযিল হওয়ার একটি স্থায়ী নিয়ম রয়েছে। আলোচ্য হাদীসে তা-ই বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি স্পষ্টত ভাষাতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'য়ালা মানুষকে শুধু শুধুই আযাবে নিমজ্জিত করেন না; বরং তিনি আযাব দেন মানুষের নিজেদের অপরাধের কারণে। তাতেও এই নীতি পালিত হয় যে, বিশেষ লোকদের অপরাধেই সর্বসাধারণ মানুষকে আযাবে নিক্ষেপ করেন না - এটি আল্লাহর নিয়ম নয়। কিন্তু যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, বিশেষ শ্রেণীর লোকদের দ্বারা প্রকাশ্যভাবে আল্লাহর নাফরমানী ও পাপকর্ম হতে সাধারণ লোকেরা দেখতে পায় কিন্তু তা বন্ধ করার সামর্থ থাকা সত্ত্বেও তারা তা বন্ধ না করে তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা বিশেষ শ্রেণীর লোকদের অপকর্মের দরুণ সাধারণ ভাবে সকল মানুষকে আযাব দিতে কুণ্ঠিত হন না।
এ কথা সত্য যে, ভাল কাজ হোক আর মন্দ কাজ হোক - সবকিছুর মূল চাবিকাঠি কার্যত সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ শ্রেণী (এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী) লোকদেরই মুষ্টিবদ্ধ থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজ ও রাষ্ট্রের সেই বিশেষ শ্রেণীর লোকদের নিয়ন্ত্রণ করা ও তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষমতা থাকে দেশের সাধারণ জনগণেরই হাতে। জনগণ ইচ্ছা করলে সমবেত ও সম্মিলিত শক্তির সাহায্যে এই বিশেষ লোকদের পাপকর্মের বিরুদ্ধে সুসংবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ও তাদের যাবতীয় পাপকর্ম বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু সাধারণ জনগণ এই দায়িত্ব পালন না করে তারা যদি নিজেদের সম্মুখে আল্লাহর নাফরমানী হতে দেখেও চুপচাপ বসে থাকে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না করে, যদি তার প্রতি বিন্দুমাত্র নমনীয়তা প্রদর্শন করে, এমনকি এই পাপচারী দ্বীন ও ঈমানের দুশমন শক্তিসম্পন্ন শাসক ও নেতৃবৃন্দকে পরিবর্তন করে আল্লাহর অনুগত দ্বীন পালনকারী ও আল্লাহভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে চেষ্টা না চালায়, বরং শাসক পরিবর্তন করা ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন কায়েম করা হরাম বলে ফতোয়া দিয়ে আল্লাহর সর্বাত্মক আযাব আসার পথ সুগম করে দেয়, তাহলে সেই বিশেষ ও সাধারণ সকল মানুষই আল্লাহর আযাবে নিষ্পেষিত ও ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য হবে। যার ফলে বিশেষ ও সাধারণ লোক নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের উপরই আল্লাহর সর্বধ্বংসী আযাব ও মহামারী গযব নাযিল হয়; জনগণের মধ্যে এক একজন লোক ব্যক্তিগত ভাবে যতই আল্লাহ-ওয়ালা হোক না কেন। বর্তমান করোনা ভাইরাস এর বাস্তব প্রমাণ।
.
এ বিষয়ে সর্তক করে দিয়ে মহান অাল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
আর তোমরা সেই ফিতনা (বিপর্যয়, মহামারী, গযব, আযাব) কে ভয় কর যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু অত্যাচারী বা অন্যায়কারীদের উপরই আপতিত হবে না (বরং ব্যাপক ভাবে সবার উপর আপতিত হবে)। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সূরা আনফালঃ০৮/২৫)

Post a Comment

0 Comments