Recent Tube

দ্বীন কায়েম নিয়ে কথিত আহলে হাদীসের বিভ্রান্তমূলক ব্যাখ্যার জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

        দ্বীন কায়েম নিয়ে কথিত    
     আহলে হাদীসের  বিভ্রান্তমূলক       ব্যাখ্যার জবাবঃ

   দ্বীন (دين) বলতে কোন আহলে হাদীস শুধু তওহীদ বুঝেন। ফলে তারা ইসলামের অন্যন্য বিধি বিধানকে দ্বীনের বহির্ভূত বলে মনে করে।  আবার কোন কোন আহলে হাদীস অন্যান্য ধর্মের ন্যায় নিছক ধর্ম মনে করেন, এ জন্য তারা নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের বাহিরে ইসলামের বাকি বিধানগুলো কে দ্বীন মানতে নারাজ। তাদের ভ্রান্ত ও কুফুরী ব্যাখ্যার জবাব পেতে হলে আগে আমাদের পবিত্র কুরআনে দ্বীন শব্দ কি কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা জানতে হবে। দ্বীন (دين) শব্দটির একাধিক অর্থ রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন অর্থে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। 

যেমনঃ
১. বিচার, প্রতিদান, প্রতিফল, বিনিময়।
২. আনুগত্য বা হুকুমমমেনে চলা।
৩. জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা।
৪. আইন, বিধান বা শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি।
নিম্নে এগুলোর সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ 

১. বিচার, প্রতিদান বা প্রতিফল: 

مَٰلِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ 

যিনি বিচার দিনের মালিক। (সূরা ফাতিহাঃ৩)


كَلَّا بَلْ تُكَذِّبُونَ بِٱلدِّينِ 
.
না, কখনই না, তোমরাতো শেষ বিচারকে অস্বীকার করে থাকো। (সূরা ইনফিতরঃ৯)

এ আয়াতগুলোতে দ্বীন বলতে বিচার, প্রতিদান বা প্রতিফল বুঝানো হয়েছে।

২. আনুগত্য বা হুকুম মেনে চলা:

أَفَغَيْرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُۥٓ أَسْلَمَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ 

তাহলে কি তারা আল্লাহর (দ্বীন) আনুগত্য ব্যতীত অন্য কিছু কামনা করে? অথচ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, ইচ্ছা ও অনিচ্ছাক্রমে সবাই তাঁর উদ্দেশে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলি ইমরানঃ৮৩)


وَقَٰتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ فَإِنِ ٱنتَهَوْا۟ فَلَا عُدْوَٰنَ إِلَّا عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ 

ফিতনা দূর হয়ে আল্লাহর দীন বা আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর; অতঃপর যদি তারা নিবৃত্ত হয় তাহলে অত্যাচারীদের উপর ব্যতীত শত্রুতা নেই। (সূরে বাকারাঃ১৯৩)

إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ فَٱعْبُدِ ٱللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ ٱلدِّينَ 

আমি তোমার নিকট এই কিতাব সত্যসহ অবতীর্ণ করেছি; সুতরাং আল্লাহর ইবাদাত কর তাঁর (দ্বীন) আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে। (সূরা যুমারঃ২)

এ আয়াতগুলোতে দ্বীন বলতে সাধারণত আনুগত্য বুঝানো হয়েছে।

৩. জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা:

إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُۗ وَمَا ٱخْتَلَفَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْعِلْمُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْۗ وَمَن يَكْفُرْ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ ٱلْحِسَابِ 

নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র (দ্বীন) জীবন ব্যবস্থা। এবং যাদেরকে গ্রন্থ প্রদত্ত হয়েছে তাদের জ্ঞান আসার পরও তারা মতবিরোধে লিপ্ত রয়েছে শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষ বশতঃ; এবং যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্ত্বর হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা আলি ইমরানঃ১৯)

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ 

আর যে কেহ ইসলাম ব্যতীত অন্য (দ্বীন) জীবন বিধান অন্বেষণ করে তা কখনই তার নিকট হতে গৃহীত হবেনা এবং পরলোকে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলি ইমরানঃ৮৫)


هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ 

সেই আল্লাহ এমন যে, তিনি নিজ রাসূলকে হিদায়াত (কুরআন) এবং সঠিক (দ্বীন) জীবন বিধান সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন ওকে সকল (বাতিল) জীবন বিধানের উপর বিজয়ী করে দেন।
(সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯)


حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ ٱلْمَيْتَةُ وَٱلدَّمُ وَلَحْمُ ٱلْخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيْرِ ٱللَّهِ بِهِۦ وَٱلْمُنْخَنِقَةُ وَٱلْمَوْقُوذَةُ وَٱلْمُتَرَدِّيَةُ وَٱلنَّطِيحَةُ وَمَآ أَكَلَ ٱلسَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى ٱلنُّصُبِ وَأَن تَسْتَقْسِمُوا۟ بِٱلْأَزْلَٰمِۚ ذَٰلِكُمْ فِسْقٌۗ ٱلْيَوْمَ يَئِسَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَٱخْشَوْنِۚ ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلْإِسْلَٰمَ دِينًاۚ فَمَنِ ٱضْطُرَّ فِى مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍۙ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ 

তোমাদের জন্য মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অপরের নামে উৎসর্গীকৃত পশু, কন্ঠরোধে মারা পশু, আঘাত লেগে মরে যাওয়া পশু, পতনের ফলে মৃত পশু, শৃংগাঘাতে মৃত পশু এবং হিংস্র জন্তুতে খাওয়া পশু হারাম করা হয়েছে; তবে যা তোমরা যবাহ দ্বারা পবিত্র করেছ তা হালাল। আর যে সমস্ত পশুকে পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয়েছে তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এসব কাজ পাপ। আজ কাফিরেরা তোমাদের দীনের তথা জীবন বিধানের বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করনা; শুধু আমাকেই ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মনোনীত করলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় আহার করতে বাধ্য হলে সেগুলি খাওয়া তার জন্য হারাম হবেনা। কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা মায়িদাঃ৩)

এ আয়াতগুলোতে দ্বীন শব্দটি জীবন বিধান বা জীবন ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

৪. আইন, বিধান বা শাসন ব্যবস্থা:

وَقَالَ فِرْعَوْنُ ذَرُونِىٓ أَقْتُلْ مُوسَىٰ وَلْيَدْعُ رَبَّهُۥٓۖ إِنِّىٓ أَخَافُ أَن يُبَدِّلَ دِينَكُمْ أَوْ أَن يُظْهِرَ فِى ٱلْأَرْضِ ٱلْفَسَادَ 
.
ফির‘আউন বললঃ আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার রবের শরণাপন্ন হোক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের (দীনের) শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। (সূরা মু'মিনঃ২৬) 

فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَآءِ أَخِيهِ ثُمَّ ٱسْتَخْرَجَهَا مِن وِعَآءِ أَخِيهِۚ كَذَٰلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَۖ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِى دِينِ ٱلْمَلِكِ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُۚ نَرْفَعُ دَرَجَٰتٍ مَّن نَّشَآءُۗ وَفَوْقَ كُلِّ ذِى عِلْمٍ عَلِيمٌ 

অতঃপর সে তার (সহোদর) ভাইয়ের মালপত্র তল্লাশির পূর্বে তাদের মাল-পত্র তল্লাশি করতে লাগল, পরে তার সহোদরের মাল-পত্রের মধ্য হতে পাত্রটি বের করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল করেছিলাম, রাজার (দ্বীনে) শাসন ব্যবস্থায় তথা আইনে তার সহোদরকে সে আটক করতে পারতনা, আল্লাহ ইচ্ছা না করলে। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নীত করি, প্রত্যেক জ্ঞানবান ব্যক্তির উপর আছেন সর্বজ্ঞানী। (সূরা ইউসূফঃ৭৬) 


ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِى فَٱجْلِدُوا۟ كُلَّ وَٰحِدٍ مِّنْهُمَا مِا۟ئَةَ جَلْدَةٍۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِى دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٌ مِّنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ 

ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী - নারী ও পুরুষ প্রত্যেককে একশ’ কশাঘাত করবে, আল্লাহর (দ্বীন) শাসন ব্যবস্থা তথা আইন কার্যকরী করতে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হও; মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূরঃ২)

অত্র আয়াতগুলোতে দ্বীন বলতে আইন, বিধান বা শাসন ব্যবস্থা বুঝানো হয়েছে। 
এখন বলেন দ্বীন কায়েম তথা পরিপূর্ণ ভাবে দ্বীন ইসলামের বিধি-বিধান, আইন-কানুন প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করতে হলে ইসলামী রাষ্ট্র  ব্যবস্থা ছাড়া কি সম্ভাব? 

 যারা দ্বীন বলতে শুধু তওহীদ বা নিছক ধর্ম মনে করে ইসলামের অন্যন্য বিধি বিধান অস্বীকার করে তারা তাগুতের দালাল, দ্বীন ইসলামের শুত্রু। আর এর পরিণাম কত ভয়ংকর তা আমার ভাষায় নয়, আল্লাহর ভাষায় দেখুনঃ 

أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ ٱلْكِتَٰبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍۚ فَمَا جَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْىٌ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَاۖ وَيَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰٓ أَشَدِّ ٱلْعَذَابِۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ 

তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে (জাহান্নামের) কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।
(সূরা বাকারাঃ৮৫

আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। ইকামতে দ্বীনের শুত্রুদের হাত থেকে ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে হেফাজত করুন।
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺁﻣﻴﻦ
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।        

Post a Comment

0 Comments