পর্ব-১৫
জাবালে উহুদ থেকে ফিরে-----নবী করিম (স) বললেন,''উহুদ পাহাড় অামাদেরকে ভালোবাসে অামরাও উহুদ পাহাড়কে ভালবাবাসি ''। ''উহুদ পাহাড় জান্নাতের একটি পাহাড় ''
হুজুর (স) অাবু বকর (রা) ওমর (রা) এবং উসমান (রা)কে সাথে নিয়ে যখন জাবালে উহুদে অারোহন করলেন,উহুদ পাহাড় অানন্দে কেঁপে কেঁপে উঠেছিল !
আল্লাহর রাসূল বললেন,ওরে উহুদ তুমি থেমে যাও,তোমার উপরে অাল্লাহর একজন নবী আছেন,একজন সিদ্দীক অাছেন অার দুইজন শহীদ রয়েছেন । সাথে সাথে উহুদ পাহাড় স্থীর হয়ে যায়৷।
গত ১৪ অাগষ্ট ১৭ইং । মদীনার গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলো জিয়ারাতের অংশ হিসেবে জাবালে উহুদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম ।
এই উহুদ পাহাড় প্রিয় নবীর রক্তাক্ত জীবনের স্বাক্ষী হয়ে অাছে ।
হুজুর (স) কোনকিছুর উপমা দিতে উহুদ পাহাড়ের কথা বলতেন। যেমন হাদীস শরীফে বিভিন্ন সময় এভাবে জাবালে উহুদের উপমা টেনেছেন। যেমন-
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের জানাজায় অংশগ্রহণ করে,নামাজ পড়ে এবং তাকে কবরও দেয় সে দুই কিরাত নেকি পাবে । আর যে ব্যক্তি শুধু জানাজার নামাজ পড়ে কিন্তু মাটি দেয় না, সে এক কিরাত নেকি পাবে।’ সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, দুই কিরাতের পরিমাণ কতটুকু? তিনি বললেন, প্রত্যেক কিরাত উহুদ পাহােড়র সমান । (বুখারি, মুসলিম)
অন্যত্র বলেছেন,যদি বাড়িতে শিকার বা কোন পাহারা ব্যতিত কুকুর পালন করে তার নেকি,আমল নামা থেকে প্রতি দিন ১ কিরাত পরিমান কমে যায় । এক কিরাতের পরিমান উহুদ পাহাড়ের সমান।-- (বুখারি-মুসলিম) ।
আবার বলেছেন,অামি যদি উহুদ পাহাড়কে বলতাম অামার জন্য৷ সোনা হয়ে যা ! তাহলে উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যেত ।
রাঈসুল মুফাসসীরিন হযরত অাব্দুল্লাহ ইবনে অাব্বাসের পা ছিলো ছোট । একদিন তিনি গাছে চড়েছিলেন,তখন তাঁর পা দেখে সঙ্গী-সাথীরা হাসতেছিলেন । নবীজি (স) বললেন সাহাবীরা হেসোনা, ক্বেয়ামতের দিন অাব্দুল্লাহ ইবনে অাব্বাসের পা হবে উহুদ পহাড়ের মত ।
প্রিয় নবী (স) এর ভালবাসার এ পাহাড়ের সামনে যখন দাঁড়িয়েছি তখন লোমকূপগুলো টানটান হয়ে যাচ্ছিলো। চোখ বেঁয়ে গালের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো অশ্রু ।
কারণ,এখানে তাকিয়ে দেখলাম শুহাদায়ে উহুদের গণ কবর । এখানে নবীজির চাচা মহাবীর অামীর হামজাসহ সত্তরজন সাহাবী শুয়ে অাছেন ।
স্বয়ং রাসূলুল্লাহর (স) এর দান্দান মোবারক শহীদ হলো এ জঙ্গে উহুদে । তবুও রহমতের নবী বলতে থাকলেন ''ও অাল্লাহ অামার জাতি বুঝেনি ''।
উহুদের যুদ্ধটি ছিল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ । ইসলামের ইতিহাসে কোন যুদ্ধই অাক্রমণাত্বক ছিলোনা । সবটাই ছিল রক্ষণাত্মক । বিশেষ করে এই যুদ্ধটি ছিল একেবারেই অযৌক্তিক এবং বদরের যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য প্রতিশোধমূলক ।
উহুদের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে মনে মনে ইতিহাসের অালোকে উহুদ যুদ্ধের চিত্র অাঁকছিলাম । অর তাকিয়ে দেখছিলাম ঐতো ''জাবালে রমা' যা উহুদেরই সিস্টার। মাঝখানে ছোট্র একটা গিরিপথ। একটু ভুলের কারণে জিতে যাওয়া যুদ্ধে পেছন দিক থেকে য়েখান দিয়ে শত্রুরা অাক্রমণ করে মুসলমানদেরকে সাময়িক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছিল এবং ইসলামের নরশার্দুল বীর অামীর হামজা (রা) কে শহীদ করেছিল ।
নবীজি (স) যুদ্ধের জন্য সাহাবীদপরকে শিষাঢালা প্রাচীরের মত দাঁড় করিয়েছিলেন । অার ঐ জাবালে রমার কাছে তীরন্দাজদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যদি তোমরা শুনতে পাও অাল্লাহর রাসূল শহীদ হয়েছেন তবুও তেমরা এখান থেকে নড়বেনা । তুমুল যুদ্ধে ধরাশায়ী হয়ে যখন মক্কার প্রতিশোধপরায়ণ কাফেররা পিছু হঠে গিয়েছিল তখন তীরন্দাজরা যুদ্ধ শেষ মনে করে জাবালে রমা থেকে নেমে এলেন । অার এই সুযোগে শত্রুরা অাক্রমণ করে মুসলমানদেরকে কাবু করে ফেলে ।
জঙ্গে উহুদে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র সাতশত অার কাফেরদের সংখ্যা ছিল তিনহাজার ।
হজরত আমির হামজা (রা.) ও হজরত আকিল (রা.) কে একই কবরে দাফন করা হয়।
উহুদ প্রান্তরে এখন একটি সুদৃশ্য মসজিদ নিমাণ করা হয়েছে। রয়েছে হজরত হামজা (রা.)-এর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় । অাছে একটি বাজার । মসজিদের সামনে উহুদ যুদ্ধের শহিদদের কবরস্থান ।
ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে এই পাহাড়ের নাম বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। মসজিদে নববি থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে মদিনার ঠিক উত্তর-পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক এই পাহাড়টির অবস্থান ।
মসজিদে নববীর ৬ নং গেটে মসজিদকে পেছনে রেখে দাঁড়ালে ''জাবালে উহুদ''র ভাসাভাসা অবস্থান দেখা যায় ।
উহুদের প্রান্তর থেকে যখন ফিরছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো প্রিয় নবীর ভালবাসার পাহাড় পেছন থেকে যেন টেনে ধরছিল । অার মনে হচ্ছিলো নেতৃত্বের অানুগত্যের অপরিহার্যতার প্রতি অাঙ্গুলি নির্দেশ করে ইসলামের স্বর্ণযুগের মসুলিম মহাবীরদের বীরত্বগাঁথাকে ধারণ করে ক্বেয়ামাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে বিশ্বনবীর ভালবাসার প্রিয় পাহাড়''জাবালে উহুদ ''।
------------------------------------------------
লেখকঃ কলামিস্ট ও প্রবন্ধ লেখক।
0 Comments