বিতি কিচ্ছা
পর্ব-৩৩
ওরা কি না খায়
হৃদয় উজাড় করা দেশপ্রেম আর মানব প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। অথচ অনেকে অন্য সব অভিযানের মত এই অভিযানকেও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। বলা বাহুল্য এরা অনেকেই ধারণা করে থাকেন, আদরের গিন্নির উচ্ছাবিলাসী আবদার রক্ষার্থে অপারগ হয়ে, অবশেষে গিন্নির মনোবাঞ্ছা পুরনার্থেই এই সব অভিযান চালানো হয়ে থাকে। এই নেতিবাচক দৃষ্টি যার যার ব্যাক্তিগত বিষয়। আমি কিন্ত সকলের মত এত নেতিবাচক হতে রাজি নই। কেননা এ যুগে অসদুপায় অবলম্বন করে রাতারাতি বড়লোক হবার স্বপ্ন অনেকের থাকলেও সকলের তো নয়। কিছু ভাল লোক আছে বলেইতো দুনিয়াটা এখনও ঠিকে আছে বৈ কি। সেই অল্প কিছুদের দলেই আমি রেখে দিতে চাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে। কারণ ওরাওতো এদেশের বাজারেই সদাইপাতি করবে, এই সব পন্যই খাবে ও ব্যবহার করবে, তাদের পরিজন তথা পুত্র কন্যাদের জন্য এগুলোই পছন্দ করবে, তাই বলতে দ্বিধা নেই যে ওরা দেশের আর সব অসাধু আমলাদের ন্যায় স্বীয় পকেট গরম করার জন্যই এই অভিযানে নামেনি।
তবে আপাদমস্তক দুর্ণীতিতে নিমজ্জিত একটি জাতির অতীত পর্যালোচনা করলে দুর্মুখোদের অনাস্থার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া না। ভাগ্য দোষে এ দুর্ভাগা দেশের দুর্ণীতি দমন কমিশনও দুর্ণীতি মুক্ত নয়। হালে এ সংক্রান্ত একটি খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন সয়ং দুর্ণীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মহোদয়। এর আগে নির্বাচন কমিশনের প্রধানও স্বীয় বিভাগের অসচ্ছতার স্বীকারোক্তি করেছেন। এতএব কেন এরা বলবে না যে দুর্ণীতি দমন অভিযানেও দুর্ণীতির আশ্রয় নেয়া হয় নাই। আসলে স্বাধীণ দেশের মানুষ স্বাধীন ভাবে মত পোষন করতে কে তাকে আটকায়। যার যা ইচ্ছা করো রে মন আপনার লাগিয়া।
ইদানিং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষাণ কর্তৃপক্ষ হানা দিয়েছেন খুচরা ঔষধ ব্যবসায়ীদের দোকানে। ওনারা নাকি পেয়েছেন দেশের ৯৩% ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি হচ্ছে। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করতে রাজি এই কারণে যে দেশে ৭% লোকের নৈতিক চরিত্রের সাফাই গাওয়া হয়েছে এই রিপোর্টে। আর বাকি ৯৩% এর ভোটে নির্বাচিত সরকারের দেশে যেমন ভোট, তেমন ভোটার, তেমন কানুন তেমন আচার হওয়াটাই স্বাভাবিক। আসলে দেশ এই ৭% লোকের সততার বদৌলতে টিকে আছে হয়তোবা। নতুবা কবেই এদেশ বিস্বর্গে চলে যেত।
এই বাংলাদেশে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল লোকের দারুন অভাব। পারত পক্ষে এদেশে আইন মান্য করে চলা দুর্বলতার পরিচায়ক। আর আইন অমান্য করার মধ্যে আছে বিরত্বের সংকেত তথা বাহাদুরী। যে যত বড় শিক্ষিত তত বেশী বে-পরওয়া।
শিক্ষত বড় লোকেরা চুরি ডাকাতি করলে তাদের হাতকড়া না লাগানোর আইন আছে। ১ম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা যদি বালিশ দুর্ণীতির মত বড় ও জগন্য অপকর্ম করে থাকেন তথাপিও তাকে বিশেষ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গ্রেফতার না করার আইন আছে। অনেকে মনে করেন এরকম আইন করাটাও এক প্রকার দুর্ণীতি।
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রিপোর্ট পেয়ে নড়ে বসলেন বিচার বিভাগ। এই তুফানে ঔষধ কর্তৃপক্ষ সহ সকলেই কম বেশ আন্দোলিত হলেন। কোম্পানীর লোকেরা হৈ হুল্লোড শুরু করল। যেন নতুন কোন ইস্যু। দৃশ্যত রিপোর্টটি সকলেই খাইলো।
------------------------
0 Comments