Recent Tube

প্রজন্মের ক্ষুধা; সামাদ আজাদ।

  
              প্রজন্মের ক্ষুধা;

  শুধু পোশাক‌ই একটি ছবিকে অনন্য করে দিয়েছে। মেয়েদের হাতে ব্যাট থাকা এখন নৈমিত্তিক  স্বাভাবিক ব্যাপার। মহিলা ক্রিকেট টিম ও আছে। গঞ্জে গ্রামেও মেয়েদের ব্যাট বা বলহাতে ছবি অহরহ দেখছি। কিন্তু সব ছাপিয়ে হেজাবী মায়ের ছবিটি নেটিজেনদের তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে গেল। পক্ষে বিপক্ষে বিপুল হৈচৈ। কিন্তু আমি কেবল মায়ের সেই গর্বিত পোশাকটি নিয়ে ভাবছি যেটি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের নান্দনিক ইউনিফর্ম। যেটাকে ধারণ করে হাজারো তরুণী আজ হৃদয়ের শান্তি খুঁজে পেয়েছে। 

২০০১ সালের কথা। ইংরেজী বিভাগে আমাদের সেশনে ৩৭ টি মেয়ে ছিলো। জাতীয় নির্বাচনের পরে ক্যাম্পাস খোলার পরে হঠাৎ দেখা গেলো এ সহপাঠীনীদের বড় একটা অংশ বোরকা পরে ক্লাসে এসেছে। একজন প্রফেসর তো ক্লাসে মন্তব্য করে বসলেন নির্বাচনের প্রভাব তো ক্লাসের ডানপাশে ব্যাপকভাবে লক্ষনীয়। তাঁর তীর্যক মন্তব্য আমরা সকলেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু বিজ্ঞ প্রফেসর বুঝেননি এটা ছিলো তাদের দীর্ঘ দিনের ক্ষুধা। শুধু অনুকূল পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছিলো। মনে থাকার কথা এরপরে একটা আন্তর্জাতিক জার্নালে রিপোর্ট হয়েছিলো ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে বোরখা পরার হার ৫০০% বেড়েছে!

ঢালাও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামে পুঁজিবাদের দানবদের ভুড়ি মোটার প্রতিযোগিতায় মেয়েদেরকে যখন পন্যের অনুঘটক বা সরাসরি পন্য বানিয়ে গন্তব্য বিহীন ট্রেনে তুলে দিচ্ছে,  যখন নারীমুক্তির নামে তাদের নারীত্ব হরণের ফন্দি এঁটে শেষবেলায় ছুড়ে ফেলে হতাশায় বন্দি করে ফেলতে চাচ্ছে তখন পোশাকের স্বাধীনতা বলতে তারা স্বল্প বসনা কে বুঝায়। প্রয়োজনে ব্যবহার করে স্বস্থা পলিথিনের মত ফু দিয়ে উড়িয়ে ফেলে দেয়ার নোংরা খেলার ফিকির আজ অগুনিত বোনদের কাছে স্পষ্ট। তাই তারা শিকড়ে ফিরতে চায়, নিজস্বতে ফিরতে চায়, ইসলামী অনুশাসনে ফিরতে চায়। এ তাকিদ তাদের নিজস্বতার, তাদের অহংকারের।

এদেশের প্রকৃত সংস্কৃতি ঠিক কোনটি তা আজো ডিফাইন করা হয়নি। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব আমাদের এমন বেকুব বানিয়ে রেখেছে যে আমরা যা ন‌ই তাকে বলা হচ্ছে সংস্কৃতি, আমাদের যা নয় তাকে বানাচ্ছি আমাদের সংস্কৃতি। বোরকা পরা মা তাই তাদের কাছে বাংলার মা নয়। বাংলাদেশের মা নাকি পেট বের করে শাড়ি পরে কপালে টিপ দিয়ে হতে হবে।

বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং নৃত্য শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট হয়েছিল। আয়োজনের যে ডামাডোল ছিলো উপস্থিতিতে সে পরিমান লোক হয়নি। বলা যায় অর্ধভর্তি স্টেডিয়ামে কনসার্ট করে হতাশ হতে হয়েছিলো আয়োজক ও অভ্যাগত শিল্পীদের।

কিন্তু ঠিক উল্টোটা দেখা গেলো তরুণ বক্তাদের মাহফিল গুলোতে। উপচে পড়া ভীড় কোনো মাঠে আর সংকুলান হয়ে উঠছিলোনা। ঘরের ছাদে গাছের মাথায় উঠে হৃদয় কাড়া বক্তব্যে পাগল হয়ে উঠলো তরুণ যুবা বৃদ্ধ। ঐশি বানীর শৈল্পিক উপস্থাপনে আত্মার ক্ষুধাটা মিটিয়ে নেয়ার এ যেনো বিশাল উপলক্ষ।

এ প্রজন্মের কাছে জ্ঞানের সকল উৎস উন্মুক্ত। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, ভাববাদ, বিপ্লব, নান্দিকতা, রসবোধ, নাস্তিকতা- আস্তিকতা, গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, মোডিফাইড সমাজতন্ত্র, আন্ত:ধর্মীয় ধারণা, ভূরাজনীতির খেলা ইত্যাদির সকল মিশেলে এক অদ্ভুত শরবত বানিয়ে খাচ্ছে আজকের প্রজন্ম। কিন্তু হৃদয়টি শূন্য হয়ে পড়ছে ক্রমশ। শূন্যতা থেকে ফাঁকা হাহাকারময় মহাশূন্যতায় খাবি খাচ্ছে এ প্রজন্ম।

রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গের শচীশের জ্যাঠা জগমোহনের মত অদ্ভুত প্যারাডক্স নিয়ে বড় হচ্ছে এ প্রজন্মের বড় একদল তরুণ। জগমোহন বলেন:
যদি ঈশ্বর থাকে তবে তিনি আমাকে বুদ্ধি দিয়েছেন। সেই ঈশ্বরের দেয়া বুদ্ধি নিয়ে বলছি ইশ্বর নেই। সুতরাং ঈশ্বর নেই।

এসব অদ্ভুতড়ে দর্শনের কবলে পড়ে খে হারানো প্রজন্মের মনে 'নেই' শূন্যতার ফাঁকা জায়গাটি পূর্ণ করার জন্য শ্বাশত বিধান কুরানের ব্যাখ্যাকে সকল আধুনিকতম বিষয়গুলোর সাথে প্রাসঙ্গিক করে তোলাটা একান্ত জরুরি। যারা এ সংকটে বিভিন্ন ডিসকোর্সে অংশ নিয়ে মানুষের জাগতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষুধাকে নিবারণের চেষ্টা করছে তাঁরা এ যুগের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, নতুন বসন্তের সুরেলা কোকিল।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ প্রবন্ধ লেখক, কলামিস্ট ও অনলাইনএক্টিভিস্ট।   

Post a Comment

0 Comments