Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব, ফজিলত, না করার পরিনতি এবং করণীয় বর্জনীয়। ---শামীম আজাদ।





কুরআনহাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব, ফজিলত, না করার পরিনতি এবং করণীয় বর্জনীয় 
                           --৭ম পর্ব;

বর-কনের সমতা বা যোগ্যতা এবং একে অপরকে দেখা;

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَخَيَّرُوا لِنُطَفِكُمْ وَانْكِحُوا الْأَكْفَاءَ وَأَنْكِحُوا إِلَيْهِمْ

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো।  
দারাকুতনী ৩৭৪৬, আল-ফাওয়ায়িদ ১৫২৭, কিতাবুল ইয়াল ১৩০। ১৩১ ইত্যাদি। 
সুনানে ইবনে মাজাহ ১৯৬৮

প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারিণী  বিবাহ করার নির্দেশনা 

عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّي أَصَبْتُ امْرَأَةً ذَاتَ حَسَبٍ وَجَمَالٍ وَإِنَّهَا لاَ تَلِدُ أَفَأَتَزَوَّجُهَا قَالَ ‏"‏ لاَ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ فَنَهَاهُ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ ‏"‏ تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ ‏"‏ ‏.‏

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদাসম্পন্ন নারীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে বন্ধা। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেনঃ না। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেনঃ এমন নারীকে বিয়ে করো যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করবো।
সুনানে আবু দাউদ ২০৫০

কুমারী বিবাহের গুরুত্ব বেশি

حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مُحَارِبٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ، عَبْدِ اللَّهِ قَالَ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ هَلْ تَزَوَّجْتَ ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ نَعَمْ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَبِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ ثَيِّبًا ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَأَيْنَ أَنْتَ مِنَ الْعَذَارَى وَلِعَابِهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ شُعْبَةُ فَذَكَرْتُهُ لِعَمْرِو بْنِ دِينَارٍ فَقَالَ قَدْ سَمِعْتُهُ مِنْ جَابِرٍ وَإِنَّمَا قَالَ ‏"‏ فَهَلاَّ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ ‏"‏

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি জনৈকা মহিলাকে বিয়ে করলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন কোন কুমারীকে না বিধবাকে? আমি বললাম, একটি বিধবাকে। তিনি বললেন, তবে কুমারী ও তার আমোদ-স্ফূর্তি হতে তুমি কতদূরে?
(মধ্যবর্তী) রাবী শু’বাহ্‌ (রহঃ) বলেন, পরে আমি ‘আম্‌র ইবনু দীনার (রহঃ)-এর নিকট এ হাদীস উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আমিও তো জাবির (রাঃ)-এর নিকট তা শুনেছি। তিনি তো বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ তবে কোন কিশোরী (তরুনী)-কে কেন নয়- যে তোমার সঙ্গে হাসি-তামাসা করত, তুমিও তার সঙ্গে আমোদ-স্ফূর্তি করতে? (ই.ফা. ৩৫০২, ই.সে. ৩৫০১)
মুসলিম ৩৫২৯

বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী পরস্পরকে দেখে নেওয়া উচিত। 
আল্লাহ তা'আলা বলেন, 
فَانْكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء 
‘তোমরা বিবাহ কর সেই স্ত্রীলোক, যাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে’।
সূরা নিসাঃ ৩

عَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرْتُ لَهُ امْرَأَةً أَخْطُبُهَا فَقَالَ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَجْدَرُ أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا فَأَتَيْتُ امْرَأَةً مِنْ الْأَنْصَارِ فَخَطَبْتُهَا إِلَى أَبَوَيْهَا وَأَخْبَرْتُهُمَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَكَأَنَّهُمَا كَرِهَا ذَلِكَ قَالَ فَسَمِعَتْ ذَلِكَ الْمَرْأَةُ وَهِيَ فِي خِدْرِهَا فَقَالَتْ إِنْ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَكَ أَنْ تَنْظُرَ فَانْظُرْ وَإِلَّا فَأَنْشُدُكَ كَأَنَّهَا أَعْظَمَتْ ذَلِكَ قَالَ فَنَظَرْتُ إِلَيْهَا فَتَزَوَّجْتُهَا فَذَكَرَ مِنْ مُوَافَقَتِهَا

মুগীরাহ বিন শু'বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে এক মহিলাকে বিবাহ করার ব্যাপারে তাঁর সাথে আলাপ করলাম। তিনি বলেনঃ " তুমি যাও এবং তাকে দেখে নাও। হয়তো তাতে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। " অতএব আমি এক আনসার মহিলার নিকটে এসে তার পিতা-মাতার নিকট তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম এবং সাথে সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাদীসও তাদের অবহিত করলাম। কিন্তু মনে হলো তার পিতা-মাতা এটা অপছন্দ করলো। রাবী বলেন, মেয়েটি পর্দার আড়াল থেকে উক্ত হাদীস শুনে বললোঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে পাত্রী দেখার আদেশ দিয়ে থাকলে আপনি দেখে নিন। অন্যথায় আমি আপনাকে শপথ দিচ্ছি (না দেখার জন্যে)। সে যেন ব্যাপারটিকে অভিনব মনে করলো। রাবী বলেন, আমি তাকে দেখে নিলাম এবং তাকে বিবাহ করলাম। পরে মুগীরাহ (রাঃ) তার সাথে সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।  
তিরমিযী ১০৮৭, নাসায়ী ৩২৩৫, দারেমী ২১৭২, মিশকাত ৩১০৭, সহীহাহ ৯৬, সুনানে ইবনে মাজাহ ১৮৬৬

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট এসে বলল যে, সে আনসারী একটি মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেছে। রাসূল (সাঃ) বললেন,
هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا فَإِنَّ فِىْ عُيُوْنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا-  
‘তাকে দেখেছ কি? কেননা আনসারদের লোকের চোখে দোষ থাকে’।
মুসলিম ৩৩৭৭, মিশকাত ৩০৯৮

পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের যেনার শামিল। অনেক সময় পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় বিষয়কে না দেখে তার রূপ-লাবণ্য, বংশ ও সম্পদ দেখেই বিবাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম পাত্রের উচিত রূপ, বংশ ও সম্পদের চেয়ে পাত্রীর দ্বীনদারীকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। পরিপূর্ণ দ্বীনদারী পাওয়া গেলে অন্য গুণ কম হ’লেও দ্বীনদার মহিলাকেই বিবাহ করা উচিত, তাহ’লে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে। 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে মহিলার বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশ-মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য্য এবং তার ধর্ম-পরায়ণতা। অতএব তুমি ধর্ম-পরায়ণা নারীর সন্ধান করো। অন্যথায় তোমার দু'হাত ধূলি ধুসরিত হোক। "  
 বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাউদ ২০৪৭, আহমাদ ৯২৩৭ দারেমী ২১৭০, ইরওয়াহ ১৭৮৩, গায়াতুল মারাম ২২, সহীহ আবী দাউদ ১৮৮৬, ইবনে মাজাহ ১৮৫৮

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলের চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে। তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২, তিরমিযি ১০৮৪, ১০৮৫, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ১০৩২৫, মু'জামুল আওসাত ৪৪৬, ৭০৭৪, ইবনে মাজাহ ১৯৬৭

এছাড়া দেখার নাম করে আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়ের একসাথে একাকী সময় কাটানো, পার্কে বসে বসে আলাপ করা, হবু বধুকে নিয়ে নির্জনে চলে যাওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যখন কোন পুরুষ-মহিলা নির্জনে একত্রিত হয়, তখন তৃতীয়জন হিসাবে সেখানে শয়তান উপস্থিত হয়

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

[‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজ্জের উদ্দেশে বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ করো।  
বুখারী ৩০০৬, মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০১৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭, মিশকাতুল মাসাবিহ ২৫১৩

ইনশাআল্লাহ চলবে...।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments