Recent Tube

মি: ম্যাক্রোন- নিজ জাতির ইতিহাসের দিকে নজর দিন প্লিজ; --- জিয়াউল হক।

 
মি: ম্যাক্রোন- নিজ জাতির ইতিহাসের দিকে নজর দিন প্লিজ;
★★★★★★★★★

   ফরাসি প্রেসিডেন্ট মি: ইমানুয়েল ম্যাক্রোন আল জাজিরা টেলিভিশনকে গতকাল (৩১ শে অক্টোবর,শনিবার, ২০২০) দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন; তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের চলমান ক্ষোভ ও বিক্ষোভের বিষয়টি বুঝতে পারেন কিন্তু তার কোন উপায় নেই, তিনি বাকস্বাধিনতা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।

  আর সেই সাথে তিনি আরও বলেছেন; বিশ্বের মাত্র গুটিকতক মুসলমান ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। সেই সন্ত্রাসের শিকার বেশিরভাগই (তার মতে শতকরা আশিজনেরও বেশি) হলো মুসলমান। তিনি ইসলামের নামে মৌলবাদকে মোকাবেলা করতে চান, কারণ এই মৌলবাদ মুসলমান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই বিপজ্জনক।

   অর্থাৎ মি: ম্যাক্রোন বিশ্বে (তার মতে) বিপদে পতিত মুসলমানদের রক্ষা করতে চান। তার এই চাওয়ার জবাব একটু পরে দেব, তার আগে বর্তমান বিশ্বে ইসলাম ও সন্ত্রাসের বাস্তবতা নিয়ে ক’টা কথা বলে নেই।
তিনি তার স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্বে সন্ত্রাসের শিকার শতকরা আশিজনই মুসলমান। প্রশ্ন হলো; এই সব হতাভাগা কোনসব সন্ত্রাসীদের হাতে মারা গেল? অর্থাৎ সন্ত্রাসটা করলো কারা? সে জবাবটা কিন্তু তিনি দেননি।

   জবাবটা একজন মুসলমান হিসেবে না হয় আমিই দিয়ে দিচ্ছি। আমেরিকার মিশিগান ইউনিভার্সিটির (University of Michigan) ইতিহাসের প্রফেসর ও গবেষক Juan Cole (জোয়ান কোল) অতি সম্প্রতি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, বিগত একশত বসরে (পুরো বিংশ শতাব্দিতে) বিশ্বের বুকে সন্ত্রাসের কারণে দশ কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের হাতে নিহত হয়েছে দুই মিলয়ন বা কুড়ি লক্ষ প্রাণ। এদের বেশিভাগই হলো ইরান ইরাকের যুদ্ধে।
 
   অপরদিকে ঐ একই সময়ে বিশ্বের বুকে হিন্দু, খৃষ্টান, ইহুদি ও বৌদ্ধ’সহ অন্যান্যদের হাতে নিহতদের সংখ্যা হলো দশ কোটি (একশত মিলিয়ন) মানুষ। তার মানে হলো, বিশ্বের বুকে মুসলমান নামধারী সন্ত্রাসীরা যতো মানুষ মেরেছে বিগত একশত বসরে, তা পঞ্চাশগুন বেশি মানুষ মেরেছে অমুসলিমরা।  আর আমরা জানি, পুরো বিশ্বই জানে, এই সব অমুসলিম সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের বেশিরভাগই হলো মুসলমান, মি: ম্যাক্রোনের মতে শতকরা আশিজন।
এই যখন বাস্তবতা, তখন তিনি ঐসব সন্ত্রাসীদের ধর্ম ও দর্শনের প্রতি অপবাদ আরোপ না করে কেন ইসলামের প্রতি অপবাদ করছেন? কেনই বা তিনি বিশ্বের বুকে ইসলাম সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বলে বলছেন?

  বলছেন এই কারণে যে, মুখে যাই বলুন না কেন? তার আসল সমস্যা হলো, মি: ম্যাক্রোন নিজে ও তার প্রশাসনের অধিকাংশদের অন্তর ইসলাম বিদ্বেষে ভরা। তারা বিবেক ও মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে চালিত হচ্ছেন না, চালিত হচ্ছেন একরাশ ঘৃণাবোধ ও বিদ্বেষ দ্বারা। অথচ অন্তর সেই বিদ্বেষ গোপন করে রাজনৈতিক কপটতার আশ্রয় নিয়ে তিনি এখন মুসলমানদের প্রতি দরদ দেখাচ্ছেন!
তবে তার এ কৌশলে কাজ হবে না তা নিশ্চিত। হবে যে না, সেটা তিনি তার নিজের দেশের ইতিহাসের দিকে নজর দিলেই বুঝতে পারবেন। তার মত মুসলমানদের প্রতি ঐ একইরকম দরদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে (!) ছুটে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট নিজেও।

   মিশর অধিকারের সময় তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় নেমেই মুসলমানদের প্রতি দরদ (!) দেখিয়েছিলেন। তাদের ললাট থেকে কষ্ট, ক্লেশ ও দূর্ভোগ দূর করার জন্যই ফরাসি সৈন্যবাহিনী নিয়ে তার আগমন, সে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন মিশরীয় মুসলমানরা তাদের দূর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে যদি তারা ফরাসি বাহিনী ও প্রশাসনকে অনুসরণ করে!

   আলেকজান্দ্রিয়ার এক হলরুমে আল আজহার থেকে প্রায় ষাটজন আলেম ও ইসলামিক স্কলারদের ডেকে এনে তিনি বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে ফরাসিরা আসলে মিশরে এসেছে মিশরীয় মুসলমানদের পশ্চাৎপরতা, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কুশিক্ষা থেকে মুক্তি দিতে।

 মিশরের মুসলমানরা বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ঠ, বরং ফরাসীরাই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও নবীর প্রকৃত অনুসারী। মিশরের মুসলমানরা নয়। নেপোলিয়ান উপস্থিত আলেমদের কাছে বড়ো উঁচুস্বরে ঘোষণা করেছিলেন; ‘nous sommes les vrais musulmans’ (ইংরেজিতে; we are the true Muslims) অর্থাৎ ‘আমরাই হলাম আসল মুসলমান’।

  ঠিক এ একই কথা মি: ম্যাক্রোন’ও আজ আল জাজিরার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছেন। তবে লাভ হবে না। বিশ্বের দুই শত কোটি মুসলমান এতোটা নির্বোধ নন। তারা আজ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশিমাত্রায় সচেতন ও সজাগ। আমি বরং উম্মাহর দুইশত কোটি সদস্যের পক্ষ থেকে ফরাসী প্রেসিডেন্টকে ইতিহাসের পাঠটা নিতে বলি।

  নেপোলিয়ানের সে ঘোষণার ফলাফল কি হয়েছিল? ইতিহাস তা খুব ভালো করেই জানে। কৈশোর বয়সে মি: ম্যাক্রোনের চেয়ে বয়সে ২৫ বসরের বড়ো স্কুল শিক্ষিকাই আজ তার স্ত্রী। আমার কাছ থেকে ইতিহাসের পাঠ নেবার দরকার নেই, আত্মসম্মানে লাগতেও পারে। তবে নিজের সেই শিক্ষিকা কাম স্ত্রীর কাছ থেকে তিনি ইতিহাসের পাঠটা আরও একবার ঝালাই করে নিতে পারেন বৈকি।
------------------------------------------------------------ 
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা গীতিকার ও বিশ্লেষক। 

Post a Comment

0 Comments