Recent Tube

কবি,ঔপন্যাসিক,সংক্ষিপ্ত গল্প লেখক মতিউর রহমান মল্লিকে রহঃ এর ৬৪ তম জন্ম বার্ষিকীতে; ---শামীম আজাদ।


কবি,ঔপন্যাসিক,সংক্ষিপ্ত গল্প লেখক মতিউর রহমান মল্লিকে রহঃ এর ৬৪ তম জন্ম বার্ষিকীতে.....! 



 মতিউর রহমান মল্লিক (জন্ম: ১লা মার্চ ১৯৫০ - মৃত্যু: ১২ আগস্ট ২০১০) হলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার। তিনি বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর মল্লিক দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব যিনি ইসলামী ধারায় অসংখ্য গান ও কবিতা রচনা করেছেন। তাকে অনেকেই সবুজ জমিনের কবি ও মানবতার কবি বলে থাকেন।

মতিউর রহমান মল্লিক

জন্মঃ ১ মার্চ ১৯৫০ বাগেরহাট
মৃত্যুঃ ১১ আগস্ট, ২০১০ ঢাকা
মৃত্যুর কারণঃ কিডনি নষ্ট

জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

শিক্ষাঃ জগন্নাথ কলেজ

পেশাঃ কবি, শিল্পী, সুরকার, গীতিকার।

প্রতিষ্ঠানঃ সবুজ মিতালী সংঘ, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী

যে জন্য পরিচিতঃ কবি

আদি শহরঃ বাগেরহাট

পিতা-মাতাঃ মুন্সি কায়েম উদ্দিন (পিতা) আছিয়া খাতুন (মাতা)

ওয়েবসাইট
 http://kobimollikfoundation.org/

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

  মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫০ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি কায়েম উদ্দিন মল্লিক স্থানীয় জারীগানের দলের জন্য গান লিখতেন। মাতা আয়েশা বেগম। তৎকালীন রেডিওতে কবি ফররুখ আহমদ যে সাহিত্য আসর পরিচালনা করতেন সেই আসরে মল্লিকের বড় ভাই কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন।[৪] পিতা মাতার সান্নিধ্যে থেকে তিনি গানের প্রাথমিক জীবন শুরু করেন। প্রাথমিক জীবনে রেডিওতে গান শুনে শুনে গান লেখা শুরু করেন। তখনকার তার প্রায় সকল গানই ছিল প্রেমের গান। পরবর্তীতে ইসলামী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলামী ধারায় গান লেখা শুরু করেন।

  মল্লিক বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন;

 কর্মজীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।

   মতিউর রহমান মল্লিক শৈশব থেকেই বিভিন্ন ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে থাকেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। তারপর একে একে তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় গড়ে ওঠে একই ধারার অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বিশ্বের যেখানেই বাংলাভাষাভাষী মুসলমান রয়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একই ধারার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন।

প্রকাশিত গ্রন্থ ও অন্যান্য;

  প্রচার বিমুখ এ ব্যক্তিটি কাজ করেছেন মানুষের জন্য,মানবতার জন্য, বিশ্বাসের জন্য। ছোট বড় সবার জন্য লিখেছেন তিনি। তার লেখা অনেক কিন্তু কমই প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিগত সফলতার চেয়ে আদর্শিক সফলতার কথাই বেশি ভেবেছেন। তার ভক্ত শুভাকাঙ্খীদের আকুল আকতিতে কথা ও সুর নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মাঝে উৎসাহের কারণে কিছু কাজকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।- 
১. নীষন্ন পাখির নীড়ে (কাব্যগ্রন্থ):আত্ম প্রকাশন, 
২. সুর-শিহরণ (ইসলামি গানের বই), 
৩. যত গান গেয়েছি (ইসলামি গানের সঙ্কলন), 
৪. ঝংকার (গানের বই) 
৫. আবর্তিত তৃণলতা (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন, 
৬. তোমার ভাষার তীক্ষ্ন ছোরা (কাব্যগ্রন্থ) বাংলা সাহিত্য পরিষদ, 
৭. অনবরত বৃক্ষের গান (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন, 
৮. চিত্রল প্রজাপতি (কাব্যগ্রন্থ) প্রফেসর’স পাবলিকেশন্স, 
৯. নির্বাচিত প্রবন্ধ (প্রবন্ধের বই), 
১০. রঙিন মেঘের পালকি (ছোটদের ছড়ার বই) জ্ঞান বিতরণী, 
১১. প্রতীতি এক (ইসলামি গানের ক্যাসেট), 
১২. প্রতীতি দুই (ইসলামি গানের ক্যাসেট), 
১৩. প্রাণের ভিতরে প্রাণ (গীতিকাব্য) উল্লেখযোগ্য।

 অনুবাদক হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পাহাড়ি এক লড়াকু নামে আফগান মুজাহিদদের অমর কীর্তিকলাপ তার বিখ্যাত অনুবাদ উপন্যাস যা কিশোকণ্ঠের পাঠকরা মন উজার করে পড়তেন নিয়মিত। মহানায়ক (উপন্যাস) ছাড়াও হযরত আলী ও আল্লামা ইকবালের মতো বিশ্বখ্যাত মুসলিম কবিদের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি।

স্বীকৃতি;

সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবি মতিউর রহমানের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাঃ

সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতালী সংঘ, বারুইপাড়া, বাগেরহাট

স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা

সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা।

সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ।

সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম।

সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বাগেরহাট।

সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ

সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট।

প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স।

বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম।

ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম।

সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স।
    
কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।

মৃত্যু

ডীপ কোমায়  ছিলেন কবি মতিউর মল্লিক
ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ কবি ও গীতিকার মতিউর রহমান মল্লিক মারাত্মক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন দীর্ঘদিন।২০১০ইং সনের ১১ জুলাই ডায়ালাইসিস শেষে বাসায় ফেরার পরপরই তার কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়। প্রায় ২৫ মিনিট শ্বাস বন্ধ-মৃত প্রায় অবস্থায় হলে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়ে কয়েক ঘণ্টা তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে রাখা হয়। পরে নেয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। তারপর ২১ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে কবি মতিউর রহমান মল্লিকের জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
উল্লেখ্য, কবি মতিউর রহমান মল্লিককে ব্যাংকক থেকে হার্টে ৫টি রিং সংযোজন করে দেশে নিয়ে আসার পর বাসায় রেখে সপ্তাহে ৩দিন তাকে ইবনে সিনায় রেখে ডায়ালাইসিস করানো হতো। এভাবে ১ বছর পর পুনরায় ব্যাংককে নিয়ে কিডনী সংযোজনের কথা ছিল। হঠাৎ করেই কাডির্য়াক এ্যারেস্টের ঘটনা ঘটনায় কবি মল্লিক ডীপ কোমায় চলে যান। 

কবির ইন্তিকালঃ

‘‘টিক-টিক যে ঘড়িটা 
বাজে ঠিক ঠিক বাজে-
কেউ কি জানে সেই ঘড়িটা 
লাগবে কয়দিন কাজে।
ঝক ঝক ফক ফক করে 
যদ্দিন ঘড়ির চেহারা- 
ততদিন তারে কিনতে চায় 
যে  খরিদদারেরা।’’ 

সেই ঘড়ির মতোই চলে গেলেন চির সবুজের কবি ও গীতিকার, ইসলামী সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মতিউর রহমান মল্লিক। ১১ আগস্ট ২০১০ ইং বুধবার দিবাগত রাত ১২:৩০টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কবির ভক্তদের মাঝে। কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা। তারই নিরলস প্রচেষ্টায় সারা দেশে নতুন ধারার ইসলামী সংগিত চর্চা শুরু হয় এবং এর বিস্তৃতি ঘটে। তার ইন্তিকালে দেশ ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো। 
আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন কবি মতিউর রহমান মল্লিককে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
আমীন।

তথ্যসূত্র

"Biography of Motiur Rahman Mollik"। মতিউর রহমান মল্লিক ফাউন্ডেশন। ২০০৮-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-২৭।
"মতিউর রহমান মল্লিক : সৌন্দর্যবাদী আধ্যাত্মিক সাধক কবি"। Naya Diganta। ১৩ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৮।
কবি মতিউর মল্লিক ছিলেন কালজয়ী প্রতিভা: বিচারপতি রউফ বাংলানিউজ২৪
"মতিউর রহমান মল্লিকের শিল্পী জীবনের গোড়ার কথা"। সাময়িকী। আগস্ট ১১, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৮।
"চির সবুজের কবি মতিউর রহমান মল্লিক আর নেই"। দৈনিক সংগ্রাম। ১৩ আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৮।

    "চির সবুজের কবি মতিউর রহমান মল্লিক আর নেই"। The Daily Sangram। ১৩ আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৮।
----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments