Recent Tube

মাসলা মাসায়েল।

 সূরা ফাতিহার পর সাকতা করা :

জেহরী ছালাতে তাকবীরে তাহরীমার পর ইমামের সাকতা করা সুন্নাত। কারণ এই সময় ‘বাইদ বায়নী..’ পড়তে হয়।[1] কিন্তু সূরা ফাতিহার পর কিংবা ক্বিরাআত শেষে সাকতা করার কোন ছহীহ হাদীছ নেই। যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো যঈফ।

(أ) عَنْ سَمُرَةَ قَالَ سَكْتَتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ  فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ وَقَالَ حَفِظْنَا سَكْتَةً فَكَتَبْنَا إِلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ بِالْمَدِيْنَةِ فَكَتَبَ أُبَىٌّ أَنْ حَفِظَ سَمُرَةُ قَالَ سَعِيدٌ فَقُلْنَا لِقَتَادَةَ مَا هَاتَانِ السَّكْتَتَانِ قَالَ إِذَا دَخَلَ فِى صَلاَتِهِ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ ثم قال بعد ذلك وإذا قرأ (ولا الضالين )..

(ক) সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে দুইটি সাকতা মুখস্থ করেছি। কিন্তু ইমরান বিন হুছাইন এর বিরোধিতা করে বললেন, আমি একটি সাকতা মুখস্থ করেছি। তখন আমরা মদ্বীনায় উবাই ইবনু কা‘বের কাছে লিখে জানতে চাইলাম। অতঃপর তিনি লিখলেন যে, সামুরা সঠিকটা মুখস্থ করেছে। সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদাকে বললাম, কোথায় সাকতা করতে হবে? তিনি বললেন, যখন তিনি ছালাত শুরু করতেন এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করতেন। অতঃপর বলেন, যখন গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন। [2]

(ب) عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ قَالَ سَكْتَتَانِ حَفِظْتُهُمَا عَنْ رَسُولِ اللهِ  قَالَ فِيْهِ قَالَ سَعِيدٌ قُلْنَا لِقَتَادَةَ مَا هَاتَانِ السَّكْتَتَانِ قَالَ إِذَا دَخَلَ فِى صَلاَتِهِ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ ثُمَّ قَالَ بَعْدُ وَإِذَا قَالَ (غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ).

(খ) হাসান থেকে বর্ণিত, সামুরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ) থেকে দু’টি সাকতা আয়ত্ব করেছি। সাঈদ বলেন, আমরা ক্বাতাদা (রাঃ)-কে বললাম, কোন দু’টি সাকতা? তিনি বললেন, যখন রাসূল (ছাঃ) ছালাত শুরু করতেন এবং যখন ক্বিরাআত শেষ করতেন। অতঃপর বলেন, যখন গায়রিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন।[3]

(ج) عَنِ الْحَسَنِ قَالَ قَالَ سَمُرَةُ حَفِظْتُ سَكْتَتَيْنِ فِى الصَّلاَةِ سَكْتَةً إِذَا كَبَّرَ الإِمَامُ حَتَّى يَقْرَأَ وَسَكْتَةً إِذَا فَرَغَ مِنْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ عِنْدَ الرُّكُوْعِ قَالَ فَأَنْكَرَ ذَلِكَ عَلَيْهِ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ قَالَ فَكَتَبُوْا فِىْ ذَلِكَ إِلَى الْمَدِيْنَةِ إِلَى أُبَىٍّ فَصَدَّقَ سَمُرَةَ.

(গ) হাসান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সামুরা (রাঃ) বলেছেন, ছালাতের মধ্যে দুইটি সাকতা আমি সংরক্ষণ করেছি। একটি হল, যখন ইমাম তাকবীর দেয় তখন থেকে ক্বিরাআত পাঠ করা পর্যন্ত। অন্যটি হল, রুকূর সময় যখন সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়া ইমাম শেষ করেন। ইমরান ইবনু হুছাইন তার এই বর্ণনা অস্বীকার করলেন। রাবী বলেন, অতঃপর তারা এ বিষয়টি লিখে উবাই (রাঃ) বরাবর লিখে মাদ্বীনায় পাঠালেন। তারপর তিনি সামুরা (রাঃ)-কে সত্যায়ন করলেন।[4]

(د) عَنِ الْحَسَنِ عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ عَنِ النَّبِىِّ  أَنَّهُ كَانَ يَسْكُتُ سَكْتَتَيْنِ إِذَا اسْتَفْتَحَ وَإِذَا فَرَغَ مِنَ الْقِرَاءَةِ كُلِّهَا.

(ঘ) হাসান থেকে বর্ণিত, সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি দুইটি সাকতা করতেন। যখন ছালাত শুরু করতেন এবং যখন সমস্ত ক্বিরাআত পড়া শেষ করতেন।[5]

তাহক্বীক্ব : উপরিউক্ত চারটি বর্ণনাই যঈফ। উক্ত সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। কারণ হাসান বাছরী সামুরা থেকে উক্ত হাদীছ শ্রবণ করেননি।[6] তাছাড়া প্রথম দু’টি বর্ণনাতে বলা হয়েছে, ছালাতের শুরুতে এবং সূরা ফাতিহা শেষ করে ‘সাকতা’ করতেন। আর পরের দু’টি বর্ণনায় এসেছে, ছালাতের শুরুতে এবং ক্বিরাআত শেষে রুকূর পূর্বে সাকতা করতেন। একই রাবী থেকে এধরনের বিরোধপূর্ণ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনাকে বিশুদ্ধ প্রমাণ করার জন্য কেউ কতিপয় ‘মুতাসাহিল’ বা শিথিলতা প্রদর্শনকারী মুহাদ্দিছ এবং মুহাদ্দিছ নন এমন কিছু ব্যক্তির উদ্ধৃতি পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন। অথচ তাদের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়- যদি তাদের মন্তব্যের সাথে পূর্বের হক্বপন্থী প্রকৃত মুহাদ্দিছগণের মন্তব্য না মিলে।[7] অতএব সাকতার হাদীছের ব্যাপারে শিথিলতা দেখানোর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া আলবানীর বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করে উক্ত বর্ণনাগুলোকে বিশুদ্ধ বলাও উচিৎ নয়। কারণ তিনি সব শেষে উক্ত বর্ণনাগুলোকে যঈফ হাদীছের মধ্যে শামিল করেছেন। উল্লেখ্য যে, আলবানী (রহঃ) রুকূর পূর্বের সাকতাকে শর্ত সাপেক্ষে সঠিক বলতে চেয়েছেন এবং ইবনু তায়মিয়া এবং ইবনু ক্বাইয়িম (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি পেশ করেছেন।[8] কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে উক্ত বর্ণনাকেও তিনি যঈফের মধ্যে     অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[9] তাছাড় এটা সূরা ফাতিহা পড়ার সাকতা নয়; বরং ক্বিরাআত ও রুকূর তাকবীর থেকে পৃথক করার জন্য সামান্য সাকতা।[10] তাই আলবানীর নাম উল্লেখ করেও কোন লাভ নেই।

(ه) قَالَ أَبُوْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ لِلْإِمَامِ سَكْتَتَانِ فَاغْتَنِمُوْا فِيْهِمَا الْقِرَاءَةَ.

(ঙ) আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বলেন, ইমামের জন্য দুইটি সাকতা রয়েছে। তোমরা দুই সাকতার মাঝে ক্বিরাআত পড়াকে গণীমত মনে করো।[11]

তাহক্বীক্ব : মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনাটি ভিত্তিহীন। বক্তব্যটি তাবেঈ বিদ্বান আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন আওফ-এর নিজস্ব। শায়খ আলবানী বলেন, আবু সালামা পর্যন্ত সনদ ‘হাসান’। কিন্তু ‘বক্তব্যটি রাসূলের মারফূ’ হাদীছ হওয়ার কোন ভিত্তি নেই’। বরং উক্তিটি আবু সালামা পর্যন্ত হওয়ার কারণে মাক্বতূ। আর যদি এটাকে মারফূ ধরে নেওয়া হয়, তবে আবু সালামা ‘মুরসাল’ তাবেঈ হওয়ার কারণে হাদীছটি যঈফ।[12]

(و) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  مَنْ صَلَّى صَلاَةً مَكْتُوبَةً مَعَ الإِمَامِ فَلَيَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فِىْ سَكَتَاتِهِ وَمَنِ انْتَهَى إِلَى أُمِّ الْقُرْآنِ فَقَدْ أَجْزَأَهُ.

(চ) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ফরয ছালাত আদায় করবে, সে যেন ইমামের সাকতার সময় সূরা ফাতিহা পাঠ করে। আর যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা শেষে আসবে, তার জন্য উহা যথেষ্ট হবে।[13]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে ইবনু উমাইর নামে একজন মুনকার রাবী আছে। তাকে কেউ পরিত্যক্তও বলেছেন।[14]

(ز) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِىَّ  قَالَ إِذَا كُنْتَ مَعَ الْإِمَامِ فَاقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ قَبْلَهُ إِذَا سَكَتَ.

(ছ) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন তুমি ইমামের সাথে থাকবে, তখন তুমি আগেই সূরা ফাতিহা পড়ে নিবে, যখন তিনি চুপ থাকেন।[15]

তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদেও ইবনু উমাইর নামে একজন মুনকার রাবী আছে। তাকে কেউ পরিত্যক্তও বলেছেন।[16]

ইবনু তায়মিয়া ও আলবানীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা : 

দাবী করা হয়েছে যে, ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেছেন, ছানা পড়াকালীন সাকতায় সূরা ফাতিহাও পড়া যায়। অথচ তিনি ইমামের সাকতা করার সময় সূরা ফাতিহা পড়ার যেমন বিরোধী, তেমনি জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে কিরাআত পড়ারও বিরোধী। সম্পূর্ণ আলোচনা না পড়েই কিংবা কিতাব না দেখেই উক্ত দাবী করা হয়েছে।[17] অনুরূপ ইমাম নাছিরুদ্দ্বীন আলবানী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ইমামের সাকতা করা এবং সে সময় মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া সম্পর্কে কোন ছহীহ হাদীছ নেই’ মর্মে তিনি যে আলোচনা পূর্বে করেছেন, তা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেই সাথে সাকতার সময় সূরা ফাতিহা পড়াকে ওয়াজিব বলেছেন। উক্ত দাবীও সঠিক নয়। কারণ উক্ত অংশ যে বই থেকে নেয়া হয়েছে তা মূল বই নয়। মাত্র কয়েক পৃষ্ঠার সূচী মাত্র।[18] অথচ এর ৭ বছর পর প্রকাশিত তাঁর মূল বইয়ে তিনি ইমামের পিছনে জেহরী ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়াকে ‘মানসূখ’ বা হুকুম রহিত বলেছেন।[19] তার এই মতই প্রসিদ্ধ। সাকতার তো কোন কথাই নেই।

অতএব জেহরী ছালাতে ইমামের পিছনে নীরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করার জন্য সাকতা করার কোন ছহীহ দলীল নেই। সমাজে যে সমস্ত বর্ণনা প্রচলিত আছে তা ত্রুটিপূর্ণ। তাই ইমামের সাথে চুপে চুপে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। সূরা ফাতিহা পড়া সংক্রান্ত আলোচনা দ্রঃ। মূলতঃ একটি সাকতাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হল- তাকবীরে তাহরীমার পর, ক্বিরাআতের পূর্বে। রাসূল (ছাঃ) এরপর সাকতা করলে ছাহাবীরা জিজ্ঞেস করতেন, যেমন ঐ সাকতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন।[20] অতএব এই ত্রুটিপূর্ণ ও সন্দেহ জনক বিষয় নিয়ে চরমপন্থা অবলম্বন করা উচিৎ নয়। তাছাড় ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, শায়খ আলবানীসহ প্রমুখ বিদ্বান মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য ইমামের সাকতা করার আমলকে ‘বিদ‘আত’ বলেছেন।[21]

[1]. বুখারী হা/৭৪৪; মিশকাত হা/৮১২। [2]. তিরমিযী হা/২৫১; আবুদাঊদ হা/৭৭৯ ও ৭৮০; ইবনু মাজাহ হা/৮৪৪। [3]. আবুদাঊদ হা/৭৮০। [4]. আবুদাঊদ হা/৭৭৭; আলবানী, যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩৫। [5]. আবুদাঊদ হা/৭৭৮; আলবানী, যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩৬। [6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৪৭; যঈফ আবুদাঊদ হা/৭৭৭-৭৮০; ইরওয়া হা/৫০৫; মিশকাত হা/৮১৮। [7]. দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬৪৬; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ৩৭৩। [8]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৪৭-এর আলোচনা, ২/২৬ পৃঃ; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৮১৮, ১/২৫৯ পৃঃ, ‘তাকবীরে তাহরীমার পর ক্বিরাআত পড়া’ অনুচ্ছেদ। [9]. যঈফ তিরমিযী হা/২৫১; যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩৫ ও ১৩৬, ১৩৮। [10]. দ্রষ্টব্য : তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৭২ পৃঃ। [11]. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান হা/৯৬৭। [12]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৪৬, ২/২৪ পৃঃ। [13]. দারাকুৎনী হা/১২২২ ও ১২৩৬। [14]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯১। [15]. বায়হাক্বী, আল-ক্বিরাআতু খালফাল ইমাম হা/১৩৯। [16]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৯২। [17]. দেখুনঃ মাজমূউ ফাতাওয়া ২৩/৩১৩-৩১৬ পৃঃ। [18]. তালখীছ ছিফাতু ছালাতিন নাবী (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৪ হিঃ/১৯৮৪ খৃঃ), পৃঃ ১৮। [19]. আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নবী (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১৪১১ হিঃ/১৯৯১ খৃঃ), পৃঃ ৯৮। [20].فلو كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يسكت تلك السكتة بعد الفاتحة بمقدارها لسألوه عنها كما سألوه عن هذه. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৪৭, ৩/২৬ পৃঃ। [21]. তামামুল মিন্নাহ পৃঃ ১৮৭; দ্রঃ সিলসিলা যাঈফাহ হা/৫৪৭-এর আলোচনা- لم ينقل أحد من الصحابة أنهم كانوا في السكتة الثانية يقرءون الفاتحة مع أن ذلك لوكان شرعا لكان الصحابة أحق الناس بعلمه فعلم أنه بدعة।

Post a Comment

0 Comments