Recent Tube

দ্বীনি প্রশ্নোত্তর।

  প্রশ্ন: যদি ফজরের আগে বিতর স্বলাত পড়তে না পারি তাহলে তা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পরে পড়া যাবে কি? আর তখন পড়লে পরের দিন হিসেবে কি দু রাকাত, চার রাকাত এভাবে জোড় সংখ্যায় পড়তে হবে? নাকি এক, তিন এভাবে বেজড় সংখ্যায় পড়তে হবে?

 উত্তর:
 বিতর সালাতের সঠিক ও উত্তম সময় হল, ইশার সালাতের পর থেকে শুরু করে ফজর হওয়ার আগ পর্যন্ত। এ মর্মে হাদিস হল:
▪আবূ সা’ঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
“ভোর (ফজর) হওয়ার পূর্বে তোমরা বিতর সালাত আদায় করো। [সহীহ মুসলিম ৭৫৪।]
▪ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
الْوِتْرُ رَكْعَةٌ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ
‘বিতর এক রাক‘আত শেষ রাত্রে’।
[সহীহ মুসলিম হা/১৭৯৩-৯৯ (৭৫২), ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৫৭, (ইফাবা হা/১৬২৭-১৬৩৩), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়-৭, ‘রাত্রির সালাত দুই দুই রাক‘আত’]
▪ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى ‏”‏ ‏.‏
“রাত্রের সালাত হল দু’রাকআত, দু’রাকআত। যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন একটি রাকআত আদায় করে নেবে, যা (তার পূর্বে আদায়কৃত সমুদয় সালাতকে) রেজোড় বানিয়ে দেবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

🌀 তবে কেউ যদি ঘুম, অসুস্থতা, ব্যস্ততা বা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি কোন কারণে রাতে তা পড়তে না পারে তাহলে ইচ্ছে করলে ফজরের আযানের পর তা আদায় করতে পারে আবার ইচ্ছে করলে দিনের বেলায়ও তা আদায় করতে পারে।
এ মর্মে হাদিস হল:
🔸 আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ نَامَ عَنْ وِتْرِهِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّهِ إِذَا ذَكَرَهُ ‏”
“যে ব্যক্তি নিদ্রা বা ভুলের কারণে বিতরের নামায আদায় করে নি, সে যেন তা স্মরণ হওয়ার পরপরই আদায় করে নেয়।” [সহীহ সুনানে আবু দাউদ, শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন হা/ ১৪৩১]
🔸 আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‏ مَنْ نَامَ عَنِ الْوِتْرِ أَوْ نَسِيَهُ فَلْيُصَلِّ إِذَا أَصْبَحَ أَوْ ذَكَرَهُ
“যে ব্যক্তি বিত্‌র সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। [তিরমিযী ৪৬৫,আহমাদ ১৪৩১,আ ১০৮৭১, আলবানী রহ. বলেন, এ হাদিসটি অন্যান্য সমার্থবোধক হাদিসের মাধ্যমে সহিহ]
🔸 অন্য হাদিসে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,
من نام عن صلاة أو نسيها فليصلها إذا ذكرها ، فإن ذلك وقتها
“যে ব্যক্তির ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যায় সে যখনই স্বরণ হবে তা আদায় করে নিবে।কেননা এটাই তার সময়। ” (বুখারী ও মুসলিম)
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
وهذا يعم الفرض وقيام الليل والوتر والسنن الراتبة ” انتهى من “الفتاوى الكبرى” (2/240
এ হাদিসটি ফরয, কিয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ), বিতর, সুন্নতে রাতেবা ইত্যাদি সকল প্রকার সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।” (ফাতাওয়া কুবরা ২/২৪০)
🔸 তাছাড়া এ মর্মে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা., আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., আয়েশা রা. প্রমূখ সাহাবী থেকে ফজরের পরে বিতর পড়ার আমল প্রমাণিত হয়েছে।

🌀 ফজরের পর বা দিনের বেলায় বিতর পড়লে জোড় সংখ্যায় পড়তে হবে না কি বেজোড় সংখ্যায়?
উত্তর:
ফজরের সময় হওয়ার পর বা দিনের বেলায় বিতর পড়লে (অধিক শক্তিশালী মতানুসারে) বিতরের সাথে আরও এক রাকআত যুক্ত করে জোড় সংখ্যায় পড়তে হবে। অর্থাৎ কারও যদি ১ রাকআত বিতর পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সে ২ রাকআত পড়বে, ৩ রাকআত পড়ার অভ্যাস থাকলে ৪ রাকআত, ৫ রাকআত পড়ার অভ্যাস থাকলে ৬ রাকআত ইত্যাদি। এগুলো দু রাকআত দু রাকআত করে সালাম ফিরিয়ে পড়বে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
وَكَانَ إِذَا شَغَلَهُ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ نَوْمٌ أَوْ مَرَضٌ أَوْ وَجَعٌ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً
“আর যদি তাঁকে নিদ্রা অথবা কোন অসুখ বা ব্যথা-বেদনা তাহাজ্জুদ থেকে বিরত রাখত তাহলে তিনি দিনে ১২ রাকআত সালাত আদায় করে নিতেনভ” (সুনান নাসাঈ,বিতর, অধ্যায়: তাহাজ্জুদ এবং দিনের নফল সালাত, পরিচ্ছেদ বিতর এবং তাহাজ্জুদের সালাত, হা/ ১৬০১, আবু দাউদ, দারেমী ইত্যাদি হাদিস গ্রন্থ, সনদ সহীহ)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলায় সাধারণত: (বিতর সহকারে) ১১ রাকআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। কিন্তু ঘুম বা অসুস্থতার কারণে তা রাতে পড়তে না পারলে দিনের বেলায় ১২ রাকআত পড়তেন। তিনি এগুলো দু রাকআত দু রাকআত করে সালাম ফিরিয়ে পড়তেন।
এ হাদিস থেকেই দিনের বেলায় বিতর পড়ার ব্যাপারে অনেক আলেম উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ কারণে এ অভিমতটি অধিক বিশুদ্ধ বলে প্রতীয়মান হয়।
যদিও অনেক আলেমের মতে তা রাতের মতই বেজোড় সংখ্যায় কাযা করতে হবে। সুতরাং কেউ যদি বেজোড় সংখ্যায় পড়তে চায় তাহলে তাতে ইনশাআল্লাহ কোন সমস্যা নেই।
আল্লাহু আলাম।
 ▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
 উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA

Post a Comment

0 Comments