বনের পশু অথবা মনের পশু -আসলে কোনোটাই কোরবাণী হয় না।
---------------------------------
আমাদের অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের মাঝেও কোরবাণী সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা ছড়িয়ে গেছে । কাব্যের ভাষায় বা কবিতার ছন্দে ছন্দে আমরাও বলে ফেলি , বনের পশুর সাথে সাথে মনের পশুটারেও কোরবাণী দাও !
বিএনপির মহাসচিবের ঈদুল আজহার বাণীতেও মনের পশু কোরবাণী দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ।
খুব সম্ভবত কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই ছন্দটি / মধুময় এই ভুলটি শুরু করেছিলেন !
বনের পশু দিয়ে কখনোই কোরবাণী হয় না । কোরবাণী করা হয় গৃহপালিত পশু দিয়ে । যে পশুগুলি স্বভাবতই প্রিয় ! আর মনের পশু কখনোই কারো কাঙ্খিত / প্রিয় বস্তু নহে । অপ্রিয় জিনিস / প্রাণী কখনোই উৎসর্গ বা কোরবাণী করা হয় না ।
‘মনের পশুকে কোরবাণী করা’ বলতে সম্ভবত খতম / জবাই অর্থে এখানে বোঝানো হয়েছে ।
যদিও মনের পশুকে খতম/ শেষ করা যায় না , দাবিয়ে রাখা যায় । যেমন লোভ , ক্রোধ , হিংসা এগুলি মনের পশু । এগুলিকে বিলকুল খতম করলে তো মানব সভ্যতা ও মানব প্রগতিই থেমে যাবে ।কাজেই মনের পশু কোরবাণী/ জবাই / খতম করা শুধু অশুদ্ধ নয় , বিপজ্জনকও বটে ! সীমিত পরিসরে মনের পশুগুলির প্রয়োজন/ উপকারিতা রয়েছে কিন্তু এগুলি অতিরিক্ত হয়ে পড়লে মানব সমাজের সকল অশান্তির কারণ হয়ে পড়ে ! একারণেই বাইরের এবং এবং ভেতরের পুলিশিং দিয়ে মনের পশুর গলায় লাগাম টানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে । মনের পশুকে দমাতে না পারলে পরকালে কঠিন শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে । কাজেই মনের পশুর জন্যে কোরবাণী নয় - ইসলামে অন্য ট্রিটমেন্ট / থেরাপি রয়েছে !
কাজেই কোরবাণীকে কোরবাণীর মূল মর্মবাণী বা নিজ ঘটনা দিয়েই বুঝতে চেষ্টা করা উচিত ! আজকের এই দিনে কিছুক্ষণ নীরবে বসে , ইব্রাহীম ( আ:) , ইসমাইল (আ:) ও মা হাজেরার ঐ ঘটনাগুলি সাদামাটা চোখ ও মনে ভাবতে চেষ্টা করি । এখানে কোনো পদ্য নেই - সেই উৎসর্গের পুরোটাই গদ্য । মানব জাতির জন্য সেই গদ্যময় ম্যাসেজটি খুবই প্রয়োজনীয় যা আমার আগের স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছি !
কাজেই আল্লাহতায়ালা যেভাবে চান আমরা যেন ঠিক সেভাবেই আমাদের নিয়্যাত / একশনকে রি- এরেঞ্জ করতে পারি - এই কামনায় সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক !
----------------------------------
লেখকঃ কলামিস্ট, প্রবন্ধ লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
0 Comments